সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

রমজানে ভেজাল বাড়ে, আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে

জিন্নাতুন নূর

রমজানে ভেজাল বাড়ে, আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে

রোকন-উদ-দৌলা

আমরা লক্ষ্য করেছি যে, রমজান মাস এলেই মানুষের মধ্যে প্রতারণামূলক প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে রোজার মাসে মুসলমানদের খেদমত করা হয়, তাদের বিনামূল্যে পণ্যসেবা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ঠিক এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। রোজার মাস এলে আমাদের দেশের এক ধরনের মুনাফালোভী ব্যবসায়ী প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অন্যায় কাজ করেন। আমি মনে করি এ ধরনের প্রতারণা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। রোজায় যারা মুনাফার জন্য খাদ্যে ভেজাল মেশান বা পণ্যের অতিরিক্ত দাম রাখেন, মানুষের সঙ্গে নানা প্রতারণা করে তাদের সৎ পথে আনার জন্য কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর পরিচালক (আইন) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সাবেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলা এসব কথা বলেন। রোকন-উদ-দৌলা বলেন, ফলের মধ্যে যেমন আমে ফরমালিন মেশানোর ঘটনা তেমন চোখে না পড়লেও খেজুরে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টি বেশ বিতর্কিত। যেমন কচুশাকে প্রাকৃতিক উপাদান আয়রন আছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এই আয়রন লোহাজাতীয় কোনো পদার্থ। একইভাবে খেজুরের মধ্যেও প্রাকৃতিকভাবে ফরমালডিহাইড বা ফরমালিন জাতীয় উপাদান থাকে। তবে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যদি কৃত্রিমভাবে খেজুরে ফরমালিন মেশান সেটি ভিন্ন কথা। এ কারণে এই বিষয়গুলো খুবই বিতর্কিত। এক্ষেত্রে খেজুরে ফরমালিন আছে কি নেই তা যাচাই করতে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারীদের খুব সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হবে। কারণ এর সঙ্গে প্রাকৃতিক বিষয়ও জড়িত। আমাদের এটিও মাথায় রাখতে হবে যে, প্রাকৃতিক কোনো উপাদান আমাদের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যদি খাবারে কৃত্রিমভাবে কোনো উপাদান যোগ করা হয় তবে আমাদের জন্য তা অবশ্যই ক্ষতিকর হবে। রাজউকের এই পরিচালক আরও বলেন, এবার অন্য যে কোনো বছরের রোজার তুলনায় ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য কম। আর এটি সম্ভব হয়েছে মিডিয়ার সচেতনতামূলক প্রচারণা, ভেজালকারী ও প্রতারকদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃঢ় অবস্থান এবং ক্রেতাদের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে। ভেজাল রোধে গৃহীত সমন্বিত পদক্ষেপের কারণে এবার রোজায় অন্য যে কোনো বারের তুলনায় অসাধুরা কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায় আছে। তবে রোজায় অসাধু ব্যবসায়ীদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য দেশের প্রচলিত আইনগুলোর কোথাও দুর্বলতা নেই বলে মনে করেন রোকন-উদ-দৌলা। তিনি বলেন, দেশে যে আইন আছে তা অপরাধীদের শাস্তি প্রয়োগের জন্য যথেষ্ট। আমাদের শুধু যথাযথভাবে এই আইনগুলো প্রয়োগ করতে হবে। আমি মনে করি প্রচলিত আইন দিয়েই অসাধু ও মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মোকাবিলা করা সম্ভব। রোজায় বিভিন্ন প্রতারকদের ফাঁদ থেকে সচেতন থাকার জন্য রোকন-উদ-দৌলা বেশ কিছু পরামর্শও দেন। তিনি বলেন, প্রতারকদের ফাঁদ থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে তাদের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে। একইভাবে এ ধরনের ঘটনা রোধে আইনের কঠিন প্রয়োগ হওয়া উচিত। আবার এটিও ঠিক যে, শুধু বিবেক-বুদ্ধির কথা বলে অসাধু ব্যবসায়ীদের সৎ ব্যবসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর