শিরোনাম
সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দুর্যোগে ক্ষতি সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্যোগে ক্ষতি সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। নানা দুর্যোগে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে দেশে ১৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণ ও বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমে আসবে।’ মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ সেমি বৃদ্ধি পেলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। গতকাল পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘বাংলাদেশের জলবায়ু-বিষয়ক পরিসংখ্যান ২০১৫’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, শস্য খাতে ৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ, প্রাণিসম্পদে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পোলট্রিতে ১ দশমিক ২১ শতাংশ, মত্স্য খাতে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ, জমিতে ২৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, বসতঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং উঠানের গাছপালায় ৮ দশমিক ১০ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনজীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কর্মসূচি প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খানা সংখ্যা ৪৩ লাখ ৬১ হাজার ২৬১টি এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকার খানার প্রধান ঘর ৭০.৩১ ভাগ কাঁচা, ১৭.৪৪ ভাগ অর্ধপাকা এবং ১.৯৫ ভাগ ঝুপড়ি। দুর্যোগের ধরন অনুযায়ী খানায় প্রভাব দেখা যায়— খরায় রাজশাহী বিভাগ প্রথম (২৫.৩৯%) এবং রংপুর বিভাগ দ্বিতীয় স্থানে (২৩.৯৯%), বন্যায় সিলেট বিভাগ প্রথম (৬৯.৯৭%) এবং ঢাকা বিভাগ দ্বিতীয় (৫১.৮৯%), জলমগ্নতায় খুলনা বিভাগ প্রথম (৩৪.৮৮%) এবং চট্টগ্রাম বিভাগ দ্বিতীয় (৩৪.৩৯%), ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগ প্রথম (৭৮.৩১%) এবং চট্টগ্রাম বিভাগ দ্বিতীয় (৩০.৯৬%), টর্নেডোতে রংপুর বিভাগ প্রথম (১২.৩০%) এবং রাজশাহী বিভাগ দ্বিতীয় (৭.৫১%), জলোচ্ছ্বাসে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগ যথাক্রমে ৩১.৫১% ও ১৩.৫১%, বজ্রপাত ও বজ্রঝড়ে (কালবৈশাখী ও আশ্বিনী ঝড়সহ) সিলেট ও রংপুর বিভাগ যথাক্রমে ৩১.৮৪% ও ২৩.৫৩%, নদী/উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগ যথাক্রমে ৭.০১% ও ৬.৮৭%, ভূমিধসে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ যথাক্রমে ০.৮০% ও ০.০২%, লবণাক্ততায় খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ যথাক্রমে ২২.২৪% ও ৫.৩০%, শিলাবৃষ্টিতে ঢাকা ও রংপুর বিভাগ যথাক্রমে ২০.৮৬% ও ১৬.৬২%, অন্যান্য দুর্যোগ— যেমন কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ, পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রভৃতিতে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ যথাক্রমে ১৪.৭৩% ও ১২.৮৬%। ২০০৯-২০১৪ সময়কালে অর্থাৎ ছয় বছরে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার খানার ৫৬% খানা একবার, ২৭% খানা দুবার, ১৭% খানা তিন বা ততধিকবার দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছিল।

জমির ক্ষয়ক্ষতি : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত ছয় বছরের পরিবারভিত্তিক ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৭৫ একর জমির মধ্যে শস্যক্ষেত্রের জমি ৮০.২২%, বসতভিটার জমি ১১.৯৭%, পুকুর ও জলাভূমির জমি ৩.৯৭%, বাগানের জমি ৩.০৬%, অন্যান্য জমি ০.৭৮% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দুর্যোগের পূর্বাভাস : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত ছয় বছরে পরিবারভিত্তিক পূর্বাভাস (আগাম সতর্কবার্তা) গ্রহণ করে যথাক্রমে ঘূর্ণিঝড়ে ৬৬.৭৩%, জলোচ্ছ্বাসে ৬১.০৩%, বন্যায় ১৭.৮৪%। অন্যদিকে যেসব পরিবার পূর্বাভাস গ্রহণ করে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে— যথাক্রমে ঘূর্ণিঝড়ে ৮৮.৪৮%, জলোচ্ছ্বাসে ৭৫.৮৫%, বন্যায় ১৮.৮৬%। দুর্যোগে পূর্বাভাস ৩৮% পরিবার টেলিভিশন, ২৫% বেতার, ২০% মোবাইল ফোন, আইভিআর প্রভৃতি থেকে, ১৪% পরিবার কমিউনিটি থেকে, ৩% পরিবার স্থানীয় প্রশাসন থেকে পেয়েছে।

দুর্যোগে আক্রান্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত ছয় বছরে দুর্যোগ আক্রান্ত ৭৪% পরিবার সরকার, ১৫% পরিবার এনজিও বা আন্তর্জাতিক সংস্থা, ৪% পরিবার স্থানীয় ধনী ব্যক্তি, ৩% পরিবার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ২% অন্যান্য উৎস থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।

 

দুর্যোগে অসুস্থতা ও আহত : প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত ছয় বছরে ১৮ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৪ জন পরিবার সদস্য অসুস্থ ও আহত হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২.৪০% পুরুষ ও ৪৭.৬০% মহিলা অসুস্থ এবং ৫৮.১২% পুরুষ, ৪১.৮৮% মহিলা আহত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৪৩ লাখ ৬১ হাজার ২৬১টি পরিবার রয়েছে। আর দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ ৪ হাজার ৩৬৭ জন। দেশের সর্বমোট প্রায় ১৩% পরিবার এবং ১২.৬৪% জনসংখ্যা দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পরিবারের আকার ৪.৬৩। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পরিবারের প্রধান ঘর ৭০.৩১%, কাঁচাঘর ১৭.৪৪% অর্ধপাকা, ১০.১৯% পাকা, ঝুপড়ি ১.৯৫% এবং অন্যান্য ০.১১%। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পরিবারের পানির উৎস ৯৫.২৩% সাপ্লাই/পাইপ, শ্যালো, ডিপ টিউবওয়েল, নলকূপ এবং ৪.৭৭% পানির উৎস পুকুর, কূপ ও অন্যান্য। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার পরিবারের মোট পাকা পায়খানা (ওয়াটার সিল ও সিলবিহীন) ৪৯.৯০%, কাঁচা পায়খানা ৪৬.৫৬% এবং খোলা জায়গা ৩.৫৪%।

সর্বশেষ খবর