বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

অর্থ উদ্ধারে চিঠি চালাচালি ও আলোচনাই সার

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ উদ্ধারে চিঠি চালাচালি ও আলোচনাই সার

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ উদ্ধার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফিলিপাইনের সঙ্গে শুধু আলোচনা আর চিঠি চালাচালিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বাংলাদেশ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ম্যানিলা থেকে ফিরে এসেছে। কিন্তু টাকা উদ্ধার প্রশ্নে কোনো অগ্রগতি নেই। তবে আগামী ২৩ থেকে ২৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের (এপিজি) বার্ষিক সভায় সদস্য দেশ হিসেবে অন্য দেশের মতো ফিলিপাইনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। সে সভায় অর্থ ফেরতের বিষয়ে ম্যানিলাকে চাপ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ফিলিপাইন বা ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগ বলছে, ফরাসউদ্দিনের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে চুরি হওয়া অর্থের প্রায় ৭০ ভাগ উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। এ জন্য অবশ্য বিকল্প পথও বলে দিয়েছেন ফরাসউদ্দিন। তিনি তার প্রতিবেদনে বলেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) চাপ দিয়েও চুরি হওয়া অর্থের সিংহভাগ উদ্ধার হতে পারে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ম্যানিলা ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত কাজেও গতি নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিআইডি, পুলিশ, এফবিআইয়ের তদন্তও চলছে ঢিমেতালে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) কোনো সংস্থাই জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না দোষীদের চিহ্নিত করতে বা অর্থ উদ্ধারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮০০ কোটি টাকা) চুরির প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। ফিলিপাইনের আরসিবিসির কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও এর মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে সুইফট কর্তৃপক্ষ ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত দায় নিতেও রাজি হয়নি। তারা বলেছে, এ ধরনের ঘটনার দায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ দায় তাদেরই বলে মনে করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে পন্থায় তারা টাকাটা স্থানান্তর করেছে, সেটা যে চুরি তা তো বোঝাই যায়। কিন্তু চোর ধরতে হলে তো সময়ের প্রয়োজন। এ ছাড়া এখানে অন্য যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তাদেরও একটা ভূমিকা রয়েছে। ফলে অর্থ উদ্ধার হবে না- এটা বলা যাবে না। আবার এটাও বলা যাবে না যে, আমরা কালই টাকাটা ফেরত পাব। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফিলিপাইনের যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন, তাদের কাউকেই সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেনি। শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। সে দেশের মুদ্রা পাচার আইনেও অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া চীনা ব্যবসায়ী উইলিয়াম গোসহ অন্য সন্দেহভাজনরাও এখন আর পুলিশের পর্যবেক্ষণে নেই বলে জানা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশ-এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে এপিজি। তবে ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ ও ফিলিপাইনকে এ ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করতে পারলে বাংলাদেশ কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়বে না। পাশাপাশি গত মাসের শুরুতে এফবিআইর এক তদন্তে বলা হয়েছিল, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার হ্যাকার গ্রুপ জড়িত। তাদের দেওয়া এই তথ্য যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবুও বাংলাদেশ কালো তালিকার ঝুঁকিতে পড়বে না। ফেড, সুইফটকে দায়ী করতে পারলে এবং অন্য হ্যাকার গ্রুপকে চিহ্নিত করতে পারলে অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হতো বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ঈদের পর ফরাসউদ্দিনের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু রিজার্ভের অর্থ উদ্ধারের জন্য এখন পর্যন্ত বাস্তবধর্মী বা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। তবে এরই মধ্যে ফিলিপাইনের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা ও চিঠি চালাচালি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর