বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার সমৃদ্ধ ও রপ্তানি করাই মূল চ্যালেঞ্জ

জিন্নাতুন নূর

দেশীয় সফটওয়্যারের বাজার সমৃদ্ধ ও রপ্তানি করাই মূল চ্যালেঞ্জ

মোস্তাফা জব্বার

রপ্তানিবাজার দখল করতে পারাটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি অর্জন হবে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হচ্ছে যে, বাইরের দিকে তাকাতে গিয়ে নিজের ঘর আমি অন্যের দখলে দিয়ে দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে ব্যাংকিং সফটওয়্যারের বাজার তৈরি করেছি। কিন্তু সে বাজার দখল করেছে বিদেশিরা। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে আমাদের দেশের বাজার ও আমাদের দেশের সফটওয়্যার বাণিজ্যে রপ্তানি শক্তিশালীকরণ। আমরা নিজেদের মেধা দিয়েই যেন এ বাজার সুরক্ষা করতে পারি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার এসব কথা বলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চাইছেন এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমাদের স্লোগানের মধ্যে আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা আছে। আমরা বেসিসের জন্ম থেকে আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার মার্কেট ও সফটওয়্যার রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। এ গুরুত্ব আমরা ধরে রাখব। বাংলাদেশে এখন যে বড় কাজগুলো হচ্ছে, তা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো করতে পারছে না। এসব কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো করছে। এমনকি আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো টেন্ডারেও অংশ নিতে পারে না। এই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ বলেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবনযাপন থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছু ডিজিটাল করতে চায়। এই হিসেবে বিবেচনা করলে ১৬ কোটি বাংলাদেশির বাজার ইউরোপের প্রযুক্তি বাজারের চেয়ে বড়। আর বাংলাদেশে কেবল আমরা যাত্রা করেছি। অন্যরা এ বাজার অনেকটা নিঃশেষ করে দিয়েছে। সেদিক দিয়ে আমাদের বাজার অনেক বড়। আর আমরা নিজের বাড়ির বাজার যদি সুদৃঢ় করতে পারি তবে তা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এজন্য সরকারের নীতি ও অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সরকারি কাজ করতে পারে, সে ধরনের আইন-কানুন সংশোধন করতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের যে মেধাসম্পদ আছে তার জন্য মেধা সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশের জায়গাগুলোকে অব্যাহতভাবে সমৃদ্ধ করতে হবে। মোস্তাফা জব্বার মনে করেন, সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, এর প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু বড় মাপের কাজগুলো এখনো বাকি আছে। এর মধ্যে বড় মাপের কাজ বলতে তিনি দুটো কাজ চিহ্নিত করেন। এর একটি, সরকারের ডিজিটালাইজেশন। অর্থাৎ সরকারি কাজগুলো সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। আরেকটি কাজ হচ্ছে শিক্ষার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন। এ দুটো জায়গায় যদি ট্রান্সফরমেশন করা যায় তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে কিন্তু চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। এ দেশে চার কোটির মতো ছাত্র-ছাত্রী আছে। তাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার জন্য সামগ্রিক পরিবর্তন— যেমন শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকের পরিবর্তন, পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন, পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তন এবং তাদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছানো— এ ধরনের অনেক ব্যয়বহুল ও বিশাল কাজ করতে হবে। আর এটি সংশ্লিষ্টদের কাছেও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে শিশুশ্রেণি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ডিজিটালি পরিবর্তন আনা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মতে, সরকার হাতির মতো। হাতির মতো বলে সরকার দ্রুত ঘুরতে পারে না। এজন্য সরকারের এই রূপান্তরটাও দ্রুত করা দরকার। আমরা আরও লক্ষ্য করছি যে, এ সরকার সাত বছর পার করেছে। কিন্তু এখনো একটি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে না যে আমরা কাগজ ছাড়া কাজ করি। এ কথা ঠিক যে, কিছু ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে মানুষের সেবার জন্য কিছু তথ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা কেবল যাত্রা করেছি, যা পুরো কাজের একটি ক্ষুদ্র অংশ। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে প্রকৃতপক্ষে গোটা দুনিয়ার চিত্র বদলে গেছে। শ্রমবাজারেও এর পরিবর্তন এসেছে। শ্রমবাজার দুই ধরনের। একটি হচ্ছে কায়িক শ্রমনির্ভর, অন্যটি মেধানির্ভর। এত দিন ধরে আমাদের শ্রমবাজার ছিল কায়িক শ্রমনির্ভর। কিন্তু এখন প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের মেধাভিত্তিক শ্রমবাজারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এজন্য আমাদের শ্রমশক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে হবে। বেসিস সভাপতি বলেন, দেশের সাইবার অপরাধ রোধে বেসিস কাজ করছে। বিশেষ করে এ ব্যাপারে ইন্টারনেট ব্যবহাকারীদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমন আমরাও গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। পাশাপাশি সরকারের সাইবার অপরাধ দমনে আইনগত ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা আশা করছি সাইবার সিকিউরিটি আইন দ্রুত পাস হবে। কারণ আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সেভাবে তৈরি হয়নি। আমাদের ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য এ খাতে আরও অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, এখন লাঠি দিয়ে নয়, প্রযুক্তি দিয়ে অপরাধ দমন করতে হবে। নির্বাচনে জয়লাভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের যে টিম তৈরি করেছিলাম, সেটি ছিল একটি ব্যালান্সড টিম। আর সেই টিমে আমার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। এ ছাড়া বর্তমান বোর্ডে কাজ করছিলেন এমন চারজনই বিজয়ী টিমে ছিলেন। আগের বোর্ডে কাজ করেছেন এমন একজনও এ টিমে আছেন। সব মিলিয়ে এ রকম একটি ব্যালান্সড টিম ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আমাদের নির্বাচনী স্লোগান ছিল ‘দেশের পক্ষে, দেশের সফটওয়্যার ও সেবা খাতের পক্ষে’। এটি ভোটারদের একটি প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। মানুষ তাই এর পক্ষেই রায় দিয়েছে। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার, আমাদের সেবা প্রতিষ্ঠান ও সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি— এই ইস্যুগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হোক তা বহুদিন ধরেই বেসিস সদস্যদের দাবি ছিল। আমরা এবার এ জায়গাগুলোতে ফোকাস করেছি, যা নির্বাচনে জয়লাভে প্রভাব রেখেছে। এ ছাড়া আমরা অত্যন্ত শালীনতার সঙ্গে এবং মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। আর আমাদের বিপরীত পক্ষ নির্বাচনে জয় পেতে নোংরামি, হুমকি ইত্যাদির আশ্রয় নিয়েছে। এর ফলে তারা তাদের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। আমি মনে করি নির্বাচনের ফলাফলে এই সামগ্রিক বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর