শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুছাতে আটকে আছে তদন্ত

নির্দেশের অপেক্ষায় পুলিশ অস্ত্র-গুলি ব্যালাস্টিক পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

মুছাতে আটকে আছে তদন্ত

সোর্স মুছাতেই আটকে আছে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার তদন্ত। পুলিশ নিশ্চিত, প্রধান সন্দেহভাজন কামরুল ইসলাম ওরফে আবু মুছাই পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সমন্বয়কারী। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই বেরিয়ে আসবে আলোচিত এ খুনের আদ্যোপান্ত।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুনের পর থেকে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে মুছার জবানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুলিশের আরেক সূত্র বলছে, তদন্তে পরবর্তী করণীয় নিয়ে ওপরের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।

মুছার পরিবারের দাবি, ১২ জুন মুছাকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। যদিও পুলিশ এ বিষয়টি স্বীকার করেনি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে টানা ১৫ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে প্রাপ্ত অনেক তথ্যেই বিস্মিত বাবুল আক্তার। দুই খুনিকে তার মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নীরবতা পালন ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না বাবুলের। মিতুকে কেন, কারা হত্যা করেছে, চোখ বাঁধা অবস্থাতেই পুরো বর্ণনা দিয়েছে দুই কিলার। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মুছাকে। গ্রেফতারদের অনেকেই মুছার নাম বলেছে। মুছাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে তদন্তে নতুন মোড় আসতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কেবল মুছাই নয়, এর বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা পেয়েছেন। এবার মুছার সঙ্গে ক্রস চেক করাটা খুব দরকার। এর বাইরেও কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। সব তথ্যই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা অবগত রয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আসার কারণে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে এখন এসপি বাবুল আক্তার। তবে মিতু হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত না হলে বাবুলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযুক্ত হলে এমনিতেই তার চাকরি চলে যাবে। আইন অনুযায়ীই তার বিচার হবে। তদন্ত প্রতিবেদনের আগে বাবুলকে অভিযুক্ত বলার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, একটি গণমাধ্যমে খবর এসেছে বাবুল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। চাকরি করতে না চাইলে তিনি পুলিশ সদর দফতরে আবেদন করবেন। এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হবে। এদিকে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘চাকরি যখন করি, চেইন অব কমান্ড বলে একটা কথা আছে। মামলার রহস্য উন্মোচনের স্বার্থে যা যা করা দরকার আমরা তা-ই করছি। এ মামলার রহস্য উন্মোচন হবেই।’ সিএমপি পুলিশের একাধিক সূত্রও নিশ্চিত করেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পলাতক’ থাকা আবু মুছা, মো. রাশেদ ওরফে ভাগ্নে রাশেদ, আবদুল নবী, মোহাম্মদ শাহজাহান রয়েছে পুলিশি কব্জায়। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়ার জন্য খুনি ভাড়া করা মুছাও তদন্ত কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন কে তাকে মিতুকে খুনের জন্য ভাড়া করেছে এবং নির্দেশনা দিয়েছে। খুনের রহস্য উন্মোচন ও পরিকল্পনাকারীর নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর অনেকটা ‘ধীরে চলো’ নীতি অনুসরণ করে এগোচ্ছে তদন্ত দল। রহস্য উন্মোচনের জন্যই মামলার অগ্রগতি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলছেন না তারা। সব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর এখন সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন শীর্ষ কর্তাদের নির্দেশের। নির্দেশ পাওয়ার পরই এ মামলার সার্বিক বিষয় এবং আসামিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দিতে পারে সিএমপি। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘মুছার পর যদি কেউ থেকে থাকে তাকেও গ্রেফতার করা হবে। একটি সুষ্ঠু তদন্ত জাতির সামনে উপস্থাপন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

অস্ত্র ও কার্তুজ ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় : মিতু হত্যায় ব্যবহার করা দুটি অস্ত্র ও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার চার রাউন্ড কার্তুজ ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বুধবার রাতেই এসব অস্ত্র ও গুলি সিলগালা করে ঢাকায় পাঠানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে একটি পয়েন্ট থার্টি টু বোর রিভলবার, সেভেন পয়েন্ট সিক্স ফাইভ বোর পিস্তল, মিতু হত্যার ঘটনাস্থল জিইসি মোড় থেকে জব্দ করা সেভেন পয়েন্ট ৬৫ এমএম ক্যালিবারের দুটি কার্তুজ, একই ধরনের অস্ত্রের তিনটি অব্যবহূত কার্তুজ। এ কার্তুজগুলো ভোলার কাছে উদ্ধার করা অস্ত্র থেকে বের হয়েছিল কিনা মূলত তা শতভাগ নিশ্চিত করতেই ব্যালাস্টিক পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার।

প্রসঙ্গত, ৫ জুন নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর