শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার ঘরে ফেরার পালা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন আর লঞ্চঘাট এখন মুখরিত ঘরমুখো মানুষের ব্যস্ততায়। পবিত্র ঈদুল ফিতরে পরিবার-পরিজন নিয়ে মহোৎসবে মেতে উঠতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ঈদের কয়েক দিন বাকি থাকলেও গতকাল থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন তারা। গতকাল সরকারি চাকরিজীবীদের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিকালেই তাদের একটি বড় অংশ ঢাকা ছেড়েছেন। গাবতলী, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটের লঞ্চঘাট ঘুরে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার চিত্র দেখা গেছে। তবে টার্মিনাল সূত্র বলছে, আরও দু-এক দিন পর ঘরমুখো মানুষের স্রোত বাড়া শুরু হবে। গতকাল সকালে ভিড় কম থাকলেও বিকালে ভিড় বাড়তে দেখা গেছে। পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত এ চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। আজ থেকে এ চাপ আরও বাড়বে। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়বে মানুষ। সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, গন্তব্যে যেতে মানুষের ঢল। পরিবারের অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন স্ত্রী-সন্তানসহ। রেলস্টেশনে লালমনিরহাটগামী রতন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে টিকিট সংগ্রহ করেছি। ঈদের আগে ঢাকা ছাড়ছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করব, ভালো লাগছে।’ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দুপুরে কথা হয় সোহান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চাঁদপুর যাচ্ছি। অফিস থেকে ঈদের আগে এক দিন ছুটি নিয়েছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ফিরব।’ বিআইডব্লিউটিএর এক পরিবহন কর্মকর্তা জানান, ভোরে খুব ভিড় থাকলেও সকালে তা কমে আসে। আজ শুক্রবার থেকে ভিড় বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। গাবতলী বাস টার্মিনালে ভিড়ের একই চিত্র দেখা যায়। স্বজনদের নিয়ে দূরবর্তী অঞ্চলে বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছেন অনেকেই। সকালের দিকে ভিড় বেশি থাকলেও দুপুরের দিকে তা কিছুটা কমেছে। তবে তা বিকাল হলেই বাড়বে বলে জানালেন একটি বাস কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহেল। গাবতলীতে আগে থেকে যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা যাচ্ছেন নির্দিষ্ট বাসে। তবে এরই মধ্যে যারা টিকিট পাননি, এমন অনেকেই আছেন, তারা যাচ্ছেন লোকাল বাসে। বাস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হানিফ পরিবহনের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আবদুস সামাদ মণ্ডল বলেন, গতকাল সকাল থেকেই চাপ ছিল। মূলত আজকেই সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন। মহাসড়কেও তাই এ দিন চাপ বেশি থাকছে।

 

চট্টগ্রাম ছাড়বেন ৮ লাখ মানুষ : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সড়ক ও রেলপথে এবার ঈদে চট্টগ্রাম ছেড়ে বাড়ি যেতে পারেন ৮ লাখ মানুষ। এর মধ্যে রেলপথে লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করবেন। আজ শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসবে নগর। আগামী রবিবার থেকে মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি মানুষের সড়ক ও রেলপথে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) সরদার শাহদাত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাঁচ দিনের আগাম টিকিট বিক্রি ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আজ থেকে আগাম টিকিটে যাত্রা শুরু হবে। আগাম টিকিটের ১০টি আন্তনগর ট্রেনসহ মেইল এক্সপ্রেস মিলিয়ে ২১ ট্রেনে শুক্রবার থেকে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাবেন। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে ট্রেনে যেতে পারেন ইতিমধ্যে সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই কথা বললেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) মিজানুর রহমান।

পুলিশের প্রস্তুতি : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন নিয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। ঈদ উপলক্ষে যানজট নিরসন ও সড়ক ব্যবস্থাপনায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান এই কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উদ্বোধন শেষে ডিআইজি সাংবাদিকদের বলেন, এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন এ জন্য গাজীপুরে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ রোধে পুলিশ কাজ করবে। যানজট নিরসন ও মহাসড়কে অপরাধ ঠেকাতে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। যানজট নিরসনে এরই মধ্যে কন্ট্রোল রুম স্থাপন, সিসি টিভি ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করেছে পুলিশ। প্রায় দেড় হাজার পুলিশ ও ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে বিভিন্ন পয়েন্টে।

সর্বশেষ খবর