শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
মাদারীপুরে শিক্ষক হত্যাচেষ্টা

নির্দেশ টেলিগ্রাম অ্যাপে, গ্রেফতার পরিকল্পনাকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দেশ টেলিগ্রাম অ্যাপে, গ্রেফতার পরিকল্পনাকারী

মাদারীপুর নাজিমুদ্দীন সরকারি কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে জামিল ওরফে আফিফ কাইফি ওরফে পথভোলা পথিককে (২৬)  গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর ডেমরার বাদশাহ সড়ক থেকে সাইফুল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। পুলিশ বলছে, সাইফুল্লাহই হলো মূল ‘পরিকল্পনাকারী’। সে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসির ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে প্রভাষক রিপনকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই হত্যার মূল ‘পরিকল্পনাকারী’ সাইফুল্লাহ। তার নির্দেশে একটি স্লিপার সেল গঠিত হওয়ার পরই রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলা হয়। তবে স্থানীয়রা টের পেয়ে যাওয়ায় জঙ্গিরা সফল হয়নি। মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রভাষক রিপন যে কলেজে শিক্ষকতা করেন সেই নাজিমুদ্দীন সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান বেলায়েত হোসেনের ছেলে গ্রেফতারকৃত সাইফুল্লাহ। ঘটনার কিছুদিন আগে বেলায়েত হোসেন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যায় প্রভাষক রিপন। এ সময় সাইফুল্লাহ তাকে টার্গেট করে। এরপর জেএমবির আমিরের কাছ থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে হত্যার অনুমতি নেয়। অনুমতি পাওয়ার পর সাইফুল্লাহ তার অনুসারী ফাহিমসহ আরও কয়েকজনকে এই হত্যার দায়িত্ব দেয়। ঘটনার সময় ফাহিমের (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) মোবাইল নিয়ে সাইফুল্লাহ দূরেই দাঁড়িয়েছিল। রিপনের ওপর যখন হামলা করে তখন স্থানীয় লোকজন দেখে ফেলে। তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ফাহিমকে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। অবস্থা বেগতিক দেখে ফাহিমের মোবাইল নিয়ে কেটে পড়ে সাইফুল্লাহ। মনিরুল বলেন, সাইফুল্লাহ শুধু এই ঘটনার পরিকল্পনাকারী নয়, অর্থদাতাও। মাদারীপুরের পুরানবাজার কামারপট্টি থেকে সে ২৭০০ টাকা দিয়ে দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি চাকু কেনে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল্লাহ এসব বিষয় স্বীকার করেছে। সাইফুল্লাহ ৪৯ জন জেএমবি সদস্যের একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা এই গ্রুপের বিষয় তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। প্রভাষক রিপনের ওপর হামলার সঙ্গে আর কে কে জড়িত ছিল সে বিষয়েও তথ্য পেয়েছি। খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ফাইজুল্লাহ ফাহিম প্রথমে হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য ছিল। এরপর সাইফুল্লাহ তাকে জেএমবিতে যোগদান করায়। জেএমবির পুলিশ, শিয়া, আহমাদিয়া, শিয়া, সংখ্যালঘুসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার টার্গেট রয়েছে। সাইফুল্লাহর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইল থেকে এসব টার্গেটের কথা জানা গেছে। তার মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার দাবি করছে সূত্রটি। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন বিকালে ফাহিমসহ তিন সন্ত্রাসী রিপন চক্রবর্তীকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা ফাহিমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এই ঘটনার তিন দিনের মাথায় ১৮ জুন পুলিশ রিমান্ডে থাকা অবস্থায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায় ফাহিম।

সর্বশেষ খবর