শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আসল অপরাধী ধরা পড়া নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে

আকতারুজ্জামান

আসল অপরাধী ধরা পড়া নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে

ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সত্যিকার অপরাধী ধরা পড়া নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। হত্যাকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমগুলোও বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছে। রিমান্ডে নেওয়ার পর এসব বিষয়ে আমরা শুধু পুলিশের ভাষ্যটাই শুনতে পাই। আমরা শুধু পুলিশের ভাষ্য শুনতে চাই না। আদালতের ভাষ্যও শুনতে চাই। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলাই এখন আদালতে উঠছে না। এটাই একটি দুর্বলতা। আমরা এখনো আদালতের হাতে প্রক্রিয়া হস্তান্তর করতে পারিনি। এত খুনের ঘটনা ঘটছে অথচ এগুলো পুলিশি তদন্তের মধ্যে রয়ে গেছে। পুলিশি ধরপাকড় আর পুলিশি ভাষ্যের মধ্যেই রয়ে গেছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে বিচার হলে সেটার একটি মানদণ্ড থাকত। এ অধ্যাপক মনে করেন, প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি পাওয়াটা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি নিরপরাধ কাউকে যেন ফাঁসানো না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। মন্জুরুল ইসলাম বলেন, যারা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা। যাতে অনেকগুলো ক্ষতি হয় বাংলাদেশের। এসবের মধ্যে রয়েছে যেমন, বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয় এবং বাংলাদেশকে যাতে অকার্যকর রাষ্ট্র বলা হয়। তিনি মন্তব্য করেন, বাইরে থেকে কোনো শক্তি এসব হত্যাকাণ্ড করছে না। বাংলাদেশের ভেতরের শক্তি এসব ঘটাচ্ছে। এবং এরা খুব পরিকল্পনা করে করছে বলে অভিমত দেন তিনি। এ অধ্যাপক বলেন, হত্যাকারীদের পরিকল্পনায় এটা রয়েছে যে, যদি ধর্মলঘুর ওপর আঘাত হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে। এ জন্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ঘটনাটি পরিকল্পনা করে করা হয়। এসব অপরাধীকে ধরতে সরকারের পক্ষ থেকে কোমর বেঁধে নামার মতো তত্পরতা চোখে পড়েনি। এখানে নিরাপত্তার বিষয়গুলোও নিশ্চিত হচ্ছে না। এসব বিষয়গুলোতে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তারা যেমন প্রস্তুতি নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে তেমন প্রস্তুতি দেখাতে পারেনি। অনেকটা গা-ছাড়া ভাব রয়েছে এসব ঘটনায়। দেশে এত গোয়েন্দা বাহিনী অথচ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের ছক ধরতে পারছে না তারা।

তিনি বলেন, বন্দুকযুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। যারা হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে তাদের আরেক উদ্দেশ্য হচ্ছে— এটি দেখানো যে, বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই। বিনা বিচারে যদি কাউকে মেরে ফেলা হয় সেটা কোনো সমাধান নয়। আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। জনবল ও দক্ষতা আনতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে আইনের বিষয়টি আইনের মধ্যে দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। পৃথিবীতে যারাই আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে তারা ভালোর থেকে মন্দ বেশি করেছে। এসব ঘটনায় যাদের ধরা হচ্ছে এটি নিয়ে কিছুই পরিষ্কার নয়। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এসব ঘটনায় কারা ধরা পড়ছে আর যারা জড়িত তাদের ধরা হচ্ছে কিনা এ বিষয়টি পরিষ্কার না। মিতু হত্যা, তনু হত্যাসহ চাঞ্চল্যকর অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সত্যিকার অপরাধী ধরা পড়ছে কিনা এটিই আমরা জানতে পারিনি। পুলিশও বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা দিচ্ছে। যদি প্রকৃত অপরাধী ধরা না পড়ে তাহলে বিচারের ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে যখন আটককৃতদের মিডিয়ার সামনে আনা হবে এবং আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম বলেন, এসব হত্যাকাণ্ড স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য হুমকি এটি বলব না। বাংলাদেশ এখন আর এমন অবস্থানে নেই। তবে এটি আমাদের জন্য উদ্বেগের। এটি ভাবমূর্তির প্রশ্ন। দেশের মানুষ খুবই ধর্মভীরু উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু মানুষ এর বাইরে গিয়ে কোনো বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারবে না। এ ছাড়া আমাদের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজের ভেতর থেকে এসব প্রতিরোধ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে এ জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

সর্বশেষ খবর