শনিবার, ২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাদাকাতুল ফিতর

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

সাদাকাতুল ফিতর

মাহে রমজানে একটি অন্যতম করণীয় বিষয় হলো দরাজ দিলে দান-খয়রাত করা। ভোগের নয়, ত্যাগের শিক্ষাই সিয়াম সাধনার অন্যতম শিক্ষা ও অনুধাবনের বিষয়। মাহে রমজানে প্রতিটি ভালো কাজ কিংবা ইবাদতের জন্য অন্য মাসের চাইতে দশ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। সে কারণে এ মাসে যত বেশি দান-খয়রাত সাদাকা ও জাকাত আদায় করা যায় তত ভালো। দান-খয়রাত সাদাকা কিংবা জাকাত শুধু টাকা পয়সা কিংবা সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে আদায় যোগ্য তা কিন্তু নয়। যার বিত্ত নেই, কিন্তু সময় আছে, শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান আছে; সে শ্রম দিয়ে, জ্ঞান-বুদ্ধি দান করে জাকাত সাদাকা আদায় করতে পারে। হাদিসে বর্ণিত আছে— নেক আমল, সদ্ব্যবহার এবং হাসিমুখে কথা বলাও সাদাকা। অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করাও সাদাকা। ‘সাদাকাতুল ফিতর’কে ব্যবহারিক অর্থে ফিতরা বলা হয়। রমজানের শেষে ঈদ উদযাপনের দিন কিংবা তার কিছু আগে থেকে মাথাপিছু যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য গরিব মিসকিনদের সাদাকা বা দান করা হয় তাকে সাদাকাতুল ফিতর বলা হয়। রোজার মাসের শেষভাগে এসে সাদাকা হিসেবে ফিতরা দেওয়া হয় বলে রোজার শেষে যে ঈদ উদযাপিত হয় ভারতীয় উপমহাদেশে তাকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইনে ‘আদিল ফিতরি’কে হারিরায়া পুয়াসা বা রোজার শেষে আনন্দ উৎসব বলা হয়। মাহে রমজানের শেষে সাদাকা হিসেবে ফিতরা দানের প্রথম উদ্দেশ্য, গরিব মিসকিনরা যাতে সব মুসলিমের সঙ্গে ঈদের জামাতে ও আনন্দ উদযাপনে শরিক হতে পারে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য, সিয়াম সাধনায় সতর্কতা সত্ত্বেও যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে যায়, সে সবের প্রতিবিধানের সুযোগ এনায়েত হয় ফিতরা দানের দ্বারা। মৌলিক প্রয়োজনের (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ (সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা এ মূল্যের অন্য কোনো মাল) সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা প্রদান ওয়াজিব। গম বা গমের আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে গম অর্ধ সা (১ কেজি ৭৫০ গ্রাম) এবং যব বা যবের আটা কিংবা খেজুর ও কিশমিশ দ্বারা ফিতরা আদায় করলে এক সা (৩ কেজি ৫০০ গ্রাম) দিতে হবে। রুটি, চাল বা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হলে মূল্য হিসেবে দিতে হবে। বন্যা, প্রাকৃতিক-দুর্যোগ দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা শ্রেয়। অন্য সময়ে অর্থ দিয়ে ফিতরা আদায় করা উত্তম। ফিতরা আদায় ওয়াজিব হওয়ার সময় ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদেক হওয়ার পর। সুবহে সাদেক হওয়ার পূর্বে কেউ মারা গেলে তার ওপর ফিতরা আদায় ওয়াজিব হবে না। আবার সুবহে সাদেকের পর কোনো শিশুর জন্ম হলে তার ওপর ফিতরা আদায় ওয়াজিব হবে। নিজের এবং নিজের নাবালিগ সন্তানদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। স্ত্রী ও বালেগ সন্তানগণ ফিতরা নিজেরাই আদায় করবে। অবশ্য তাদের পক্ষ থেকে দিলেও ফিতরা আদায় হবে। ফিতরা ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করা মুস্তাহাব, নামাজের পরে দিলেও জায়েজ। তবে পূর্বে আদায় করাই উত্তম। জাকাত পাওয়ার উপযুক্ত গরিব মিসকিন বা অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত। একজনের ফিতরা একজনকে অথবা কয়েকজনকে দেওয়া জায়েজ। তবে একজনকে দেওয়াই উত্তম। একদল লোকের ওপর যে ফিতরা ওয়াজিব তা এক মিসকিনকে দেওয়াও জায়েজ। ফিতরা গোপনে দেওয়া শ্রেয়। লেখক : সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর