রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বীভৎস হামলায় নিহত ২৮

রাতেই ২০ জিম্মিকে হত্যা, সাড়ে ১১ মিনিটের অপারেশন থান্ডারবোল্ট, তিন বিদেশিসহ উদ্ধার ১৩, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বীভৎস হামলায় নিহত ২৮

রাজধানীর গুলশানে এই হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টেই হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। গতকাল সকালে যৌথ অভিযানের পর সাঁজোয়া যানসহ কমান্ডো সদস্যরা। ডানে নিহত তিন বাংলাদেশি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সামরিক বাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার জিম্মি সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটেছে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারীদের হামলায় নজিরবিহীন জিম্মি পরিস্থিতি সৃষ্টির ১২ ঘণ্টা পর গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় ৪৬ স্বতন্ত্র ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কমান্ডো দল ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে। এ সময় কমান্ডো দলের সঙ্গে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের     তুমুল সংঘর্ষ হয়। প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানও অংশ নেয় অভিযানে। সাড়ে ১১ মিনিটে সহস্রাধিক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সশস্ত্র ছয় সন্ত্রাসীকে হত্যার পর জিম্মিদের মধ্যে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সমর্থ হয় কমান্ডো দল। রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে ২০ জিম্মির লাশ উদ্ধার করা হয়। এদের ১৫ জনই বিদেশি, যার মধ্যে পাঁচজন ছিলেন নারী। এর আগে শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হন পুলিশের ৪০ জন সদস্য।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অভিযানের আগেই শুক্রবার রাতে ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নাঈম আশফাক বলেন, অভিযানের মাধ্যমে উদ্ধার ১৩ জনের  মধ্যে তিনজন বিদেশি, যাদের একজন জাপানি ও দুজন শ্রীলঙ্কান। বাকিরা বাংলাদেশি। অভিযানে সাতজন সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয় এবং এক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া অভিযান শেষে তল্লাশিকালে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের সবাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের জবাই করা লাশ তারা ভেতরে পেয়েছেন। এদের মধ্যে ইতালির নাগরিক নয়জন, জাপানি সাত, ভারতীয় একজন রয়েছেন। এ ছাড় বাংলাদেশি রয়েছেন তিনজন।

হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি সংকট শুরুর ঘণ্টা পাঁচেক পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস ঘটনার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। আইএসের মুখপত্র ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’র বরাত দিয়ে এসব খবরে দাবি করা হয়, ‘তাদের’ এ হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪০ জন, যাদের কয়েকজন বিদেশি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকজনের রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখিয়ে সেগুলো হলি বেকারিতে জিম্মি বিদেশি নাগরিকদের বলে দাবি করেছে ‘আমাক’।

নিহত ২০ জিম্মি ও সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ছয় সন্ত্রাসীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নজিরবিহীন এই বীভৎস হামলার ঘটনার পর গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব মিডিয়ায় এ জিম্মি সংকটের ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পায়।

ঘটনার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী পুরো ঘটনা মনিটর করেন। রাতেই পরিস্থিতি নিয়ে গণভবনে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সেনাবাহিনীর প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। সিলেট থেকে প্রথম প্যারা কমান্ডো আনা হয়, সাভার ও ক্যান্টনমেন্ট থেকে কমান্ড নিয়ে আসা হয়। ভোর ৪টা পর্যন্ত বসে কীভাবে অপারেশন চালানো হবে, সেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নির্ঘুম রাত কাটে প্রধানমন্ত্রীর।

অপারেশন থান্ডারবোল্ট : মাত্র সাড়ে ১১ মিনিটের সফল অপারেশনের মাধ্যমেই জিম্মিদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। সকালেই প্যারা কমান্ডোদের উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় সিলেট থেকে। সকাল সোয়া ৮টার কিছু পরই সাঁজোয়া যান নিয়ে অভিযান শুরু করের কমান্ডোরা। দুটি জলপাইরঙা সেনা সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে আর্টিজান বেকারির সীমানা দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। পরে অভিযানে যুক্ত হয় আরও একটি জলপাই রঙের এপিসি। সাদা আরেকটি সাঁজোয়া যান ছিল রাস্তায়। এ সময় বিকট শব্দে বাজছিল একটি গাড়ির অ্যালার্ট সিস্টেম। আশপাশের ভবনের ছাদে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল আর টেলিস্কোপ লাগানো স্নাইপার রাইফেল নিয়ে অবস্থান নেন কমান্ডোরা। জানা গেছে, সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়ন, পাঁচটি মেডিকেল ইউনিট, নৌ-কমান্ডো এবং ১০ টি এপিসি (আর্মড পারসোনাল ক্যারিয়ার) নিয়েই অপারেশনের নেতৃত্ব দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মজিবুর রহমান। তবে এর বাইরেও র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিজ্ঞ ফাইটাররা আশপাশে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। কয়েকজন সন্ত্রাসী কমান্ডোদের আক্রমণে ভীত হয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের ঘায়েল করেন র‌্যাবের সদস্যরা। জানা গেছে, বিশেষ এই অপারেশনের জন্য প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘ফিবুয়া’য় (ফাইটিং অ্যান্ড বিল্ডআপ এরিয়া) অভিজ্ঞ কমান্ডোদের নিয়ে আসা হয়। এরা ‘সিকিউবি’ (ক্লোজ কোয়ার্টার ব্যাটেল)-এর জন্য বিশেষভাবে পারদর্শী। শহুরে ঘিঞ্জি এলাকায় অপারেশনে সর্বনিম্ন ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে সফলতা ছিনিয়ে আনতে এ দলের সদস্যরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সাড়ে ১১ মিনিটের মূল অপারেশনের আগে ২০ মিনিটে সেনাবাহিনীর তিনটি এপিসি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর দেয়াল ভেঙে ভেতরে অবস্থান নেয়। এ সময় কমান্ডোদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। কমান্ডোরা এলোপাতাড়ি গুলি না করে ভেতরে গিয়ে খুব কাছে থেকে গুলি করতে থাকেন। মাত্র সাড়ে ১১ মিনিটের মধ্যে সফল অপারেশনের সমাপ্তি ঘটে। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে। পরে কমান্ডো ও ইঞ্জিনিয়ার্সের সদস্যরা ভবনটিতে প্রবেশ করে অবিস্ফোরিত দ্রব্যগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি একে-৪৭ রাইফেল, পাঁচটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি পিস্তল (বিহার), চারটি ম্যাগাজিন, একটি চায়না পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, আটটি চায়না পিস্তলের অ্যামুনেশন, তিনটি ছুরি ও একটি হেলমেট। ব্রিগেডিয়ার মজিবুর বলেন, ‘বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের অবস্থান থাকতে পারবে না। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আমরা। এই মনোবল নিয়ে প্রতিটি সেনাসদস্য আজকের (শনিবার) অপারেশনে অংশ নেন।’ অভিযান শেষ হওয়ার পর ক্যাফের পাশের বহুতল ভবনটির গ্যারেজে হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে কয়েকজন যুবককে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শুইয়ে রাখতে দেখা যায়। তবে তারা কারা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। বেকারির পেস্ট্রি শেফের পোশাক পরা একজনের সঙ্গে কয়েকজনকে একটি মাইক্রোবাসেও তুলতে দেখা যায়। অনেকক্ষণের নীরবতা ভেঙে আবার বিকট শব্দ ১০টা ৫৯ মিনিটে। নিষ্ক্রিয় করা হয় আরেকটি বোমা। সকাল সোয়া ১১টায় বেকারির প্রাঙ্গণে আনা হয় কয়েকটি কার্টন। ভেতর থেকে বের হয় অবশ্য খাবার। রক্তাক্ত অভিযানের পর ক্লান্ত সেনাসদস্যরা খাবার আর পানীয় নিয়ে গাছের ছায়ায় বসে পড়েন। পাশের ১০ তলা ভবনের বারান্দা থেকে উঁকি দিতে দেখা গেছে দুই বিদেশি নাগরিককে। নির্মাণ শেষ হয়ে যাওয়া ভবনটির অধিকাংশ ফ্ল্যাটই ফাঁকা, যার বেশ কয়েকটিতে অভিযানের সময় ছিলেন স্নাইপার রাইফেল হাতে সেনাসদস্যরা। সাড়ে ১০টার দিকে তাদের অনেককেই ছাদ থেকে নেমে যেতে দেখা যায়। আর্টিজানের বিপরীত দিকের ভবনটির ছাদে রাত থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন কমান্ডোরা। তারাও নেমে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে দেখা যায় জ্যাকেট পরা সিআইডি সদস্যদের। একটু পর পাশের একটি ভবনের গেটে দেখা মেলে দুজন নারীপুলিশের। বোঝা যায় পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে।

যেভাবে ঘটনা : রাত সাড়ে ৮টার দিকে আর্টিজান রেস্তোরাঁয় একদল সন্ত্রাসী দুটি মাইক্রোবাসে করে বোমা মারতে মারতে ঢুকে পড়ে। তারা অস্ত্রের মুখে রেস্তোরাঁর সবাইকে জিম্মি করে। খবর পেয়ে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ছুটে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আহাদুল ইসলাম, বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল করিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই কর্মকর্তারা জানতে পারেন, রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কিছু লোককে জিম্মি করে রেখেছে সন্ত্রাসীরা। তখন ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাব মহাপরিচালক রেস্তোরাঁর দিকে এগিয়ে গেলে আগেই ঢুকে পড়েন ওসি সালাহউদ্দিন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেতর থেকে সন্ত্রাসীরা গুলি করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সালাহউদ্দিন। এগিয়ে গিয়েও ফিরে আসেন ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দুর্বৃত্তদের গুলি এসে এসি রবিউল করিমের গলায় বিদ্ধ হলে তিনিও লুটিয়ে পড়েন। একের পর এক ছুড়তে থাকা হ্যান্ডমেইড গ্রেনেডে আহত হতে থাকেন র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ, পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন, এসআই রফিকুল, কনস্টেবল জিয়াসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্য। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে।

রাত সোয়া ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যান র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। ভেতরে বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করা হয়েছে। বেনজীর আহমেদ যখন কথা বলছিলেন, তখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াত) টিম। এর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাকলী, বনানী, গুলশান ১ নম্বর মোড়, নতুনবাজার, নর্দ্দা থেকে গুলশান এলাকায় প্রবেশের সব পথ। রাত ১২টায় খবর আসে, গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওসি সালাহউদ্দিন মারা গেছেন। এর কিছুক্ষণ পর আসে গুলিবিদ্ধ এসি রবিউলের মৃত্যুর খবর। সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্যারা কমান্ডোরা ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করার পর সব অপরাধীকে নির্মূল করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে।’ এরপর তল্লাশি চালিয়ে ২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এদের সবাইকে রাতেই হত্যা করা হয়। ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’ নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারলেও তারা সবাই বিদেশি বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা। অভিযান চালিয়ে একজন জাপানি, দুজন শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অভিযানে ছয় হামলাকারী মারা পড়েছেন বলে জানান ব্রিগেডিয়ার নাঈম। একজন হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের কথাও জানান তিনি।

উৎকণ্ঠার অবসান সাড়ে ১১ মিনিটে : গুলশানের স্প্যানিশ রেস্টুরেন্টে বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ১৩ ঘণ্টার আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার অবসান হয় মাত্র সাড়ে ১১ মিনিটে। শুক্রবার রাত সোয়া ৮টায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রেস্টুরেন্টের সবাইকে জিম্মি করলে রাতভর বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। গতকাল সেনা সদর অফিসার্স মেসে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে অভিযান পরিচালনার জন্য সরকার প্রধান আদেশ দেন। সে অনুযায়ী সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ পরিকল্পনা করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব সম্মিলিতভাবে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ পরিচালনা করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী আরও বলেন, সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযান সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে অপারেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে সকাল সাড়ে ৮টায় অপারেশনের সব কার্য সম্পন্ন করা হয়। অবসান ঘটে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার।

পরিচয় মিলছে হামলাকারীদের : হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয়  সশস্ত্র হামলাকারিদের মধ্যে পাঁচ জনের ছবি গতরাতে প্রকাশ করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এরা হলেন উত্তরবঙ্গের বিকাশ, ডন ও রিপন, সিরাজগঞ্জ কাজিপুরের আকাশ ও বগুড়ার বাঁধন। এই পাঁচ হামলাকারী কমান্ডো অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এরা তালিকাভুক্ত জঙ্গি। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ তাদের খুঁজছিলো।

সাত জাপানি নিখোঁজ : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় ৭ জাপানি নাগরিক নিখোঁজ হয়েছেন। জাপান সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, জাপানের এক নাগরিককে উদ্ধার করা হলেও সাতজন এখনো নিখোঁজ।

কেবিনেটের প্রধান সহকারী সচিব কইচি হাগিউদা গতকাল এক বিবৃতিতে জানান, হামলার সময় জাপানের আটজন নাগরিক ওই রেস্টুরেন্টে অবস্থান করছিলেন। তিনি আরও বলেন, জাপানের যে নাগরিককে পুলিশ উদ্ধার করেছে তাকে গুলি করা হয়েছিল। তিনি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

ওই আটজন বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তারা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির একটি প্রজেক্টের কাজে ওই রেস্তোরাঁয় অবস্থান করছিলেন।

সর্বশেষ খবর