সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

শোকে মুহ্যমান দেশ

মরদেহ সিএমএইচে, নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোকে মুহ্যমান দেশ

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় নৃশংস ও ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনায় শোকে মুহ্যমান গোটা দেশ। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। রেস্তোরাঁর কাছে ফুল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের শ্রদ্ধা জানান স্বজন, বন্ধু ও সাধারণ মানুষ। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক পালন করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে নিহত ২০ বিদেশি নাগরিকের লাশ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। শুক্রবার রাতে সন্ত্রাসীদের নজিরবিহীন পৈশাচিকতায় বাকরুদ্ধ, হতবিহ্বল সবাই। শোক ছুঁয়ে যাচ্ছে দেশের প্রতিটি মানুষকে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে শোক পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নজিরবিহীন এই জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও নানাভাবে আসছে শোকের প্রকাশ। কেউ কেউ তাদের প্রোফাইলের ছবিতে কালো ব্যাজ রেখেছেন; কারও প্রোফাইলের ছবির পুরোটাই ঢেকে গেছে শোকের কালোতে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দুই দিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোকের শেষ দিনে আজ রাজধানীতে নিহতদের প্রতি আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানানো হবে। সকাল ১০টায় আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দুপুর ১২টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে গুলশানে নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রবি ও সোমবার শোক পালনের বিষয়ে আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, ‘আর্টিজান বেকারিতে একদল সন্ত্রাসীর হাতে নৃশংসভাবে শাহাদাত বরণকারী দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নিরীহ দেশি-বিদেশি ব্যক্তিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশে ৩ ও ৪ জুলাই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শোক পালিত হবে।’ গতকাল রবিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন অফিসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। এই দিন সকাল থেকেই রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে থাকে। এর মধ্যেই গুলশান এলাকায় শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয় সাধারণ মানুষ। রেস্তোরাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্বজনরা। নিহতদের নাম লিখে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিদেশিরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মুক্তিযোদ্ধা আক্কু চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বলার কিছু নেই। মনে হচ্ছে একাত্তরে ফিরে গেছি। ধর্মের নামে বিকৃতি, ধর্মের নামে খুনোখুনি বন্ধ করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের সোনার বাংলা গড়তে পারব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে হলে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।’

চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভীষণভাবে শোকাহত। যারা এখানে নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এই শোক আমরা বয়ে বেড়াব। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ চাই। যেখানে সব ধরনের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করবে।’ সরকারি ভাষ্যমতে, রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি নামের রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা গত শুক্রবার রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক। এর মধ্যে জাপান সরকার তাদের সাত নাগরিকের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে। ইতালির নয়জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। একজন ভারতীয় নাগরিক। শুক্রবার রাতে অভিযান চালাতে গিয়ে মারা গেছেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আর গত শনিবার সকালে অভিযানে মারা গেছে ছয় সন্ত্রাসী। গ্রেফতার হয়েছে একজন। অভিযানে একজন জাপানি, দুইজন শ্রীলঙ্কানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

ক্রিকেট তারকাদের শোক : শুক্রবার রাতে গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিস্মিত ও মর্মাহত তামিম ইকবাল। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একের পর এক টুইট করেছেন বাংলাদেশ দলের এই বাঁ-হাতি ওপেনার। একটি টুইট বার্তায় তামিম লিখেছেন, ‘এটা আমাদের দেশের আসল ছবি না। আমাদের যেন আর কখনো এভাবে পরিচিত হতে না হয়। হে আল্লাহ, আমার দেশ-ঘরকে শান্তিতে রাখুন!’ আরও একটি টুইট বার্তায় দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান লিখেছেন, ‘গত রাতে হলি আর্টিজানে যা হলো এটা বাংলাদেশের চেহারা নয়।’ এ ছাড়া হ্যাশ ট্যাগে লিখেছেন, ‘প্রে ফর ঢাকা’ বা ‘ঢাকার জন্য প্রার্থনা’। ফেসবুকে প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে শোক জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহ, নাসির হোসেন, মুমিনুল হকের মতো তারকারাও। ছবির নিচের অংশে পতাকায় লেখা ‘উই আর বাংলাদেশ’।

২০ বিদেশির লাশ সামরিক হাসপাতালে : নিহত ২০ বিদেশি নাগরিকের লাশ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেহ মর্গের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছে। সিএমএইচে রেখেই লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। আর্মি স্টেডিয়ামে আজ নিহতদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। এই ২০ লাশ বাদেও সন্ত্রাসী ছয়জনের লাশও রয়েছে একই স্থানে।

সর্বশেষ খবর