সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফারাজের জন্য কাঁদছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফারাজের জন্য কাঁদছে মানুষ

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিহত ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের দৌহিত্র ফারাজ আয়াজ হোসেনকে (২০) প্রথমে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল বন্দুকধারীরা। শনিবার সকালের দিকে জঙ্গিরা যখন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে ছেড়ে দিচ্ছিল, তখন তারা ফারাজকেও ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ফারাজ স্বার্থপর হতে চায়নি। তার সঙ্গে থাকা একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান বন্ধুকে ফেলে সে একা বের হবে না বলে জানিয়ে দেয়। জঙ্গিরা তার প্রত্যুত্তর দিয়েছে, সঙ্গে থাকা দুজনের সঙ্গে ফারাজকেও নৃশংসভাবে খুন করে। এমন নিষ্কলুষ বন্ধুবৎসল মায়াবী তরুণকেও রেহাই দেয়নি জঙ্গিরা। গতকাল দিনভর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ফারাজের জন্য বিষণ্ন আকুলতা প্রকাশ করেছে অসংখ্য মানুষ। ফারাজের মতো এমন সম্ভাবনাময় তাজা প্রাণের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কাঁদছে সবাই। প্রত্যক্ষদর্শী একজনের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসকে ফারাজের আত্মীয় হিশাম হোসেন জানান, ফারাজকে চলে যেতে বললে সে তার সঙ্গে থাকা দুজন মেয়ে বন্ধুকেও ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। তাদের একজন ভারতীয় ও আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় এবং তাদের পরনে পশ্চিমা পোশাক থাকায় বন্দুকধারীরা ওই দুজনকে ছাড়তে রাজি হয়নি। দুই বন্ধুকে না ছাড়িয়ে নিজেও চলে আসতে অস্বীকার করে ফারাজ। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শেষে ওই বেকারি থেকে যাদের লাশ বের করা হয়, সেখানে ফারাজের লাশও ছিল। শনিবার সকালে বন্দুকধারীরা হিজাব পরিহিত কয়েকজন নারীকে মুক্তি দিয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসকে জিম্মি দশার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন ওই বেকারিটির শেফ সমীর বরাই। যিনি নিজেও জিম্মিদশায় ছিলেন, পরে কোনো রকমে পালিয়ে বের হতে পেরেছিলেন। শেফ সমীর বরাই বলেছেন, বন্দুকধারীদের ভয়ে প্রথমে তিনিসহ সাত-আটজন ওয়াশরুমে পালালেও পরে বন্দুকধারীরা তাদের অভয় দিয়ে বলে, বাঙালিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা এখানে শুধু বিদেশিদের হত্যা করব। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখতে বন্দুকধারীদের দারুণ আগ্রহ ছিল বলে দাবি সমীরের। একপর্যায়ে বেকারির ওয়াইফাই সংযোগও চালু করতে স্টাফদের বলে তারা। এমনকি জিম্মিদের মোবাইল ফোনের সাহায্যে নিহতদের রক্তাক্ত লাশের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করে বন্দুকধারীরা। শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় একটি স্প্যানিশ বেকারিতে কয়েকজন বন্দুকধারীর হাতে ২০ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে তিন বাংলাদেশির একজন ছিলেন ফারাজ আয়াজ হোসেন। অন্য দুজন বাংলাদেশি হলেন— ঢাকার একটি আর্ট গ্যালারির সাবেক প্রধান ইশরাত আখন্দ ও ল্যাভেন্ডারের মালিকের নাতনি অবিন্তা কবির। বন্দুকধারীরা জিম্মিদের প্রথমে গুলি করে এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বলে জানিয়েছেন সমীর। বিদেশিদের একের পর এক হত্যা করলেও বন্দুকধারীরা বেকারির স্টাফ ও সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি বলে দাবি করেন সমীর। গভীর রাতের দিকে বন্দুকধারীরা অন্য জিম্মিদের চা এবং কফি পরিবেশন করতে বলে। আর রাত সাড়ে ৩টার দিকে মুসলমান জিম্মিদের জন্য সাহরিতে মাছ এবং চিংড়ি পরিবেশনের আদেশ দেয়। বন্দুকধারীদের একেবারে কাছ থেকে দেখা ও তাদের সঙ্গে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা থেকে সমীর বরাই বলেন, তারা খুবই শিক্ষিত এবং স্মার্ট। তাদের দেখে কেউ মনে করবে না যে, তারা এমন একটা কাজ করতে পারে। সূর্যাস্তের আগে বন্দুকধারীরা বন্দীদের নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন পাঠ করতে বলে।

সর্বশেষ খবর