মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জিজ্ঞাসাবাদ চলছে আটকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চাঞ্চল্যকর জিম্মি হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দীন আহমেদ। গত রাত ৮টার দিকে দায়ের হওয়া মামলা নম্বর-১। তবে বহুল আলোচিত নৃশংস ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত করা হলেও গতকাল পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে আটকদের অনেক জবাব অসংলগ্ন। জঙ্গি হামলা ও তত্পরতা নিয়ে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব। তবে এ ব্যাপারে কোনো রকম তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না তারা। অন্যদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, গুলশানের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুজন আটক রয়েছেন। তাদের একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা উন্নতির পথে। সুস্থ হওয়ার পরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জানা গেছে, এ ঘটনায় আটক প্রকৌশলী হাসনাত রেজা করিম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি তত্পরতার অভিযোগ উঠেছিল। এ জন্য তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকে বেসিক ইঞ্জিনিয়ার্স লি. নামে পারিবারিক ডেভেলপার ব্যবসায় সময় দিচ্ছিলেন তিনি। তার ডাকনাম সাইফুল। শুক্রবার দিবাগত রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হাসনাত ও তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। জিম্মিদশা চলার সময় কয়েকটি ছবিতে দেখে মনে হচ্ছে, তিনি হয়তো দুর্বৃত্তদের সহায়তা করছেন। রেস্তোরাঁর দ্বিতীয় তলার একটি ছবিতে দেখা গেছে, হাসনাত হাঁটছেন আর সিগারেট ফুঁকছেন। আর তার পেছনে তুই বন্দুকধারী। কমান্ডো অপারেশনে নিহত নিবরাস ইসলামও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৌশলী হাসনাতকে গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে আসা হলেও তার স্ত্রীকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম বার বারই দাবি করছেন, নিবরাস ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও তিনি তাকে আগে থেকে চিনতেন না। বড় মেয়ে সাবার জন্মদিন পালন করতেই তারা ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঊর্ধ্বতন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসনাতের কাছ থেকে অনেক তথ্যই পাওয়ার আশা করছি আমরা। হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে তার গভীর যোগাযোগ ছিল। তবে তিনি অনেক ঠাণ্ডা প্রকৃতির ও কৌশলী।’ পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকও বলেছেন, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় মামলা হলে নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিইউ) তদন্ত করবে। এরই মধ্যে ছায়াতদন্ত শুরু করেছে সিটি ইউনিট, র‌্যাব, পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ও সিআইডি। এদিকে গতকাল গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আর্টিজান রেস্তোরাঁর কিছু দূরে শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাধারণ মানুষ ফুল আর মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের স্মরণ করছেন। আগতদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। চোখ মুছতে মুছতে তারা ওই এলাকা ত্যাগ করেন। বেলা ৩টা পর্যন্ত দেখা যায় এ দৃশ্য। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁটিতে তলোয়ার-আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে ঢুকে পড়ে কয়েকজন জঙ্গি। তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে। ঘটনার পরপরই অভিযান চালাতে গেলে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। আহত হন ৪০ জনের মতো। জঙ্গিরা ওই রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জিম্মিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। পরদিন শনিবার সকালে যৌথবাহিনী ওই রেস্তোরাঁয় কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ছয় জঙ্গি নিহত হয়। আটক করা হয় একজনকে। তবে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করেন কমান্ডোরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর