রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পদত্যাগ দাবি এ মুহূর্তে সঠিক রাজনীতি নয়

মেজর মো. আখতারুজ্জামান (অব.)

সন্ত্রাস দমনে সরকারের চরম ব্যর্থতায় পদত্যাগ দাবি না করে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়ালে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি বাড়ত বলে অনেকেই মনে করেন। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রী কিংবা মন্ত্রী-এমপি হওয়াও মূল উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। তাই যদি হয় তাহলে যেখানে সরকারের ব্যর্থতার জন্য জনগণের নিরাপত্তা  বিঘ্নিত সেখানে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকারের পাশে দাঁড়ানোই অনেক বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করত। এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ দেশে আরও বেশি বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করবে, যা কোনো জনকল্যাণকামী রাজনৈতিক দল চাইতে পারে না।

আসলে কোনো সরকারই চিরস্থায়ী নয়। সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অবশ্যই পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তন নিজেদের অনুকূলে নিতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক রাজনীতি করতে হবে। পুত্রহারা মায়ের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে নাটকীয়ভাবে ছুটে গিয়েছিলেন, ম্যাডামও কিন্তু একইভাবে শুক্রবার গুলশান হামলার পরে শনিবার ২ জুলাই দুপুর বেলা গণভবনে ছুটে গিয়ে সরকারকে হতভম্ব করে দিতে পারতেন। শুরু করতে পারতেন দেশে রাজনীতির এক নতুন পথযাত্রা, যার শতভাগ কৃতিত্ব হতো বিএনপি নেত্রীর। দেশের আপামর জনগণসহ বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে দেখত বিএনপির প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতির বলিষ্ঠ অবস্থান। আর তখন নির্দ্বিধায় বিএনপি শুধুমাত্র দেশের জনগণের কাছেই প্রহণযোগ্যতা পেত না, বিশ্ববাসীকেও বিএনপির পাশে নিয়ে আসতে পারত। সব সময় সব বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করা সঠিক রাজনীতি নয়। সব সময় কর্মীদের খুশি করার বক্তৃতা দেওয়াই শুধু রাজনৈতিক বক্তৃতা হতে পারে না। ঐক্যের আহ্বান মানে অন্যরা এসে ঐক্য করবে ভাবা যেমন সঠিক রাজনীতি নয়, তেমনি দূর থেকে কাউকে ঐক্যের কথা বলে ঐক্য করা যায় না। কারও সঙ্গে ঐক্য করতে হলে যার সঙ্গে ঐক্য করার দরকার বিনা দাওয়াতে তার বাড়িতে গিয়ে সেই ঐক্যের কথা বলে আসতে হবে এবং অনেকের মতে তা হবে সঠিক রাজনীতি। গুলশান হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের একটি মহাসুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। বিভেদের রাজনীতি অবসানের একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ম্যাডাম যদি কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে গণভবনে ছুটে যেতেন, ছুটে যেতেন মর্গে পুলিশ অফিসারদের মরদেহের পাশে, ছুটে যেতেন পুলিশ লাইনে, ছুটে যেতেন আর্মি স্টেডিয়ামে তাহলে অন্তত চক্ষু লজ্জার খাতিরে হলেও কিছু দিনের জন্য পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রক্ষা পেত। অথচ তা না করে বিএনপির কিছু রেডিমেড নেতা ম্যাডামের বক্তব্য ধরে সাংবাদিকদের সামনে বড় বড় বুলি আউড়িয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দিতে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। যেসব নেতা সাংবাদিকদের সামনে বড় বড় কথা বলেন, তাদের উচিত জনসমাবেশ করে জনগণের সামনে এসব বক্তব্য রাখা। জনগণের সামনে জনসভায় সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বক্তৃতা দেওয়ার হিম্মত ওই রেডিমেড নেতাদের কতটুকু আছে তা জনগণ দেখতে চায়। সবশেষে ‘ম্যাডামের’ সদয় অবগতির জন্য বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, এই সরকারের পদত্যাগ চাইতে হবে না। কারণ এ সরকারের আর মাত্র আড়াই বছর সময় আছে। এর মধ্যে সরকার পরিবর্তন হবেই, কিন্তু সেই পরিবর্তনে আপনার, আমাদের, বিএনপির কোনো ইতিবাচক সুযোগ আছে কিনা, সেই অংক কষার সময় এসেছে। বেয়াদবি মাফ করবেন ‘ম্যাডাম’— আবারও যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, তাহলে ইতিহাস কিন্তু দল বা ব্যক্তি কাউকেই ক্ষমা করবে না। তখন কিন্তু আপনার পদত্যাগের দাবি উঠতে পারে, যা মানার দায়িত্ব আপনার কাঁধেই পড়বে।

সর্বশেষ খবর