সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

পার্থিব জীবনের চাহিদা অপূর্ণ না থাকায় বিপথে

—অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা

পার্থিব জীবনের চাহিদা অপূর্ণ না থাকায় বিপথে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা মনে করেন, গুলশান হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া তরুণরা বিপথে গেছে পার্থিব কোনো চাহিদা অপূর্ণ না থাকায়। তার মতে, যারা দুনিয়ায় কোনো কষ্ট অনুভব করে না, জীবনযুদ্ধ বলতে কোনো বিষয়কে বোঝে না, তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে মটিভেটেড করা অত্যন্ত সহজ। কেননা দুনিয়ার কোনো বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ না থাকায় তারা পরজীবনের দিকে আকৃষ্ট হয়। এ জন্য হয়তো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী ধনাঢ্য পরিবার ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বেছে নেয়। কেননা দুনিয়ায় তাদের অপূর্ণ বলতে কিছু থাকে না। এমনকি শিক্ষাজীবনে একজন ছাত্রকে যে পরিশ্রম করতে হয়, এদের তাও করার প্রয়োজন পড়ে না। কেননা প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে এরও প্রয়োজন হয় না। তাদের জন্য আগে থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত থাকে। ফলে শিক্ষা অর্জন যে কষ্ট ও পরিশ্রমসাধ্য, তাও তারা বুঝতে পারে না। আবার দেখা যায়, ছাত্র থাকাবস্থায় পরিবারের সঙ্গে খুব একটা সময় তাদের কাটে না। এমনকি ঈদ বা উৎসবেও তারা পরিবার ও প্রতিবেশীর সঙ্গে মেশে না। বরং মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছুটি কাটাতে চলে যায়। এতে অল্প বয়সে তারা অনেক কিছু পেয়ে যায়। দুনিয়ায় কোনো কিছু তাদের অপ্রাপ্তি থাকে না। এটিই তাদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ফলে তারা খুব সহজেই জঙ্গিবাদীদের নজরে পড়ে। তাই এক বা একাধিক জনকে মেরে নিজেরা মরে যায় পরজগতের আশায়। এখানে তাদের পরজগতের বিষয়ে অনেক লোভ দেখানো হয়। জিনাত হুদা বলেন, বর্তমান তরুণদের অধিকাংশই জানে না তাদের মনস্তাত্ত্বিক সংগ্রামের কাহিনী। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কী পড়ানো হচ্ছে, সেখানে কেউ তাকে মটিভেটেড করছে কি না, সেটাতেও সরকারের কোনো নজরদারি নেই। এমনকি মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক বন্ধন—এর কোনোটাই তারা ঠিকমতো পায় না। ফলে জঙ্গিবাদ একটা পৃথিবীব্যাপী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদীরা তাদেরই খুঁজে নেয়, যাদের পার্থিব জীবনের প্রতি কোনো মোহ নেই। এতে তাদের খুব সহজেই ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আমাদের পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করতে হবে। সন্তানদের নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিশেষ করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, সৃষ্টিকর্তাই সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক। এ জন্য তিনি বিভিন্ন শ্রেণি, গোত্র, ছোট, বড়, উঁচু, নিচুর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করেননি।

সর্বশেষ খবর