মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
১৪ দলের সমাবেশে বক্তারা

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলুন গণপ্রতিরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলুন গণপ্রতিরোধ

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশ করে ১৪ দল —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পাড়া, মহল্লা ও ওয়ার্ডে জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং রাজধানীতে ২০ জুলাই অভিভাবক ও ২১ জুলাই নারী সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জোটের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজ নিজ সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সমাবেশে নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াতের প্ররোচণায় কতগুলো জঙ্গি সংগঠন দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা দ্ব্যর্থকণ্ঠে ঘোষণা দেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক মদদদাতাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এদের শিকড় সমূলে উত্পাটন ও ধ্বংস না করা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ঘরে ফিরে যাবে না। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ৩১ দলীয় জোটের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জাসদের (একাংশ) শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মৃণাল কান্তি দাস, এ কে এম রহমতউল্লাহ, শাহে আলম মুরাদ, জেপির শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, বিএনএফ’র আবুল কালাম আজাদ, গণতন্ত্রী পার্টির ব্যারিস্টার আরস আলী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের এস কে সিকদার, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, চিত্রনায়ক ফারুক, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস, স্বাচিপের ডা. অধ্যাপক আবদুল আজিজ, শিক্ষক নেতা মাকসুদ কামাল, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাইফুর রহমান সোহাগ, জাকির হোসাইন, যুব মহিলা লীগের নাজমা আক্তার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের পঙ্কজ দেবনাথ, শ্রমিক লীগের শুক্কুর মাহমুদ প্রমুখ। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রাক্তন শিবির কর্মীরাই এখন আইএস-এ যোগ দিয়েছে। খালেদা আগুন দিয়ে বাস পুড়িয়ে সফল হয়নি। এখন জঙ্গিদের দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন যে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে, তার পেছনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান।  কর্মসূচি ঘোষণা করে নাসিম বলেন, আগামী ১২ থেকে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ কমিটিতে থাকবেন শিক্ষক, চিকিৎসক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ সমাজের বিশিষ্ট জনেরা। এ কমিটি খেয়াল রাখবে এলাকায় নতুন কেউ এসেছে কিনা, তার গতিবিধি সন্দেহজনক হলে থানায় জানাবে। এ ছাড়া কেউ নিখোঁজ থাকলে তাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবে। তিনি বলেন, রাজধানীতে ২০ জুলাই অভিভাবক ও ২১ জুলাই নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ থেকে সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখতে ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে মায়েদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। আগামী ২৪ জুলাইয়ের পর থেকে রংপুর, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের আরও বেশ কিছু অঞ্চলে ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা সমাবেশ করবেন, প্রচারণা চালাবেন। এসব এলাকায় কারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তা খুঁজে বের করা হবে জানান নাসিম।

বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া গুলশানের ঘটনাকে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান বলেন! কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় খুব স্বল্প সময়ে হামলাকারীদের দমন করার পর উনি সুর পাল্টিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলেন। তিনি বলেন, সাফ কথা পাকিস্তানের এজেন্ট ও পদলেহনকারীদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হতে পারে না, আমাদের ঐক্য হবে স্বাধীনতাকামী-অসাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে। রাশেদ খান মেনন বলেন, চক্রান্তকারীরা বিদেশিদের হত্যার মাধ্যমে জঙ্গিবাদকে আন্তর্জাতিক করণের চেষ্টা করেছে। সংখ্যালঘুদের হত্যা করে দেশকে সাম্প্রদায়িক আবহের সৃষ্টি করতে চাইছে। এসব ঘটনা ঘটিয়ে কিছু আন্তর্জাতিক প্রভু আছে তারা বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে চায়। পরিকল্পিত রক্তাক্ত ঘটনা ঘটিয়ে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে উনি জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। দেশের জনগণ তাদের এসব ষড়যন্ত্র কোনো দিনই সফল হতে দেবে না। হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিদের সঙ্গে আপস করবে না। জঙ্গিদের আমরা ধ্বংস করব। এ জন্য ১৪ দলের নেতা-কর্মীকে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, এ আক্রমণের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা ইসলাম মানে তারা নামাজের সময় মানুষ খুন করতে যায় না। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, জঙ্গি বিরোধী আন্দোলনে আপনারা কেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে আলাপ করেন? আপনারা কেন তাকে এত গুরুত্ব দেন? খালেদা জিয়াকে এত গুরুত্ব দেবেন না। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, খালেদা জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতাতেই এসব হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশের সর্বত্রই এদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করা হবে। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলার দিন তারেক রহমানের কর্মচারী পরিচয়ে খালেদা জিয়াকে পাকিস্তান ও লন্ডন থেকে টেলিফোন করা হয়— হামলার ঘটনায় খালেদা জিয়া জড়িত এটা কি প্রমাণ করে না? নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, জঙ্গি হামলা বন্ধ করতে হলে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যারা পিস টিভির পক্ষে কথা বলছেন, তাদের কার্যকলাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হোক, তারাও জঙ্গি কিনা? আবদুল বাসেত মজুমদার জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনজীবী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা কেউ এসব ঘৃণ্য শত্রুদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে যাবেন না। বরং এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয় সেই ভূমিকা পালন করুন।  শহীদ মিনারে জনতার ঢল : সমাবেশ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জনতার ঢল নেমেছিল। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ‘রুখে দাঁড়ায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল নিয়ে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। সমাবেশ উপলক্ষে শহীদ মিনারের অদূরে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে পুলিশ। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, মত্স্য ভবন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে অফিস ফেরতগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

সর্বশেষ খবর