মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেই জঙ্গিদের লাশ গ্রহণ করেনি কেউ

পাঠানো হবে আঞ্জুমানে

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর সেনা অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করেননি তাদের স্বজনরা। ঘটনার নয় দিন পার হলেও তাদের পরিবার লাশ নিতে আসেনি। ফলে সমাহিত করা হয়নি নয় দিনেও। পরিবার তাদের লাশ নিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। তবে নিহত দুজনের পরিবার জানিয়েছে, তাদের সন্তানের লাশ তারা নিজেরা দাফন করতে চান। আর্থিক দৈন্যের কারণে ঢাকা থেকে লাশ নিতে পারছেন না তারা। আর বাকিদের পরিবার সন্তানদের এমন কর্মকাণ্ডে চরম হতাশ, যে কারণে লাশ নিতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাদের। এদিকে জঙ্গিদের লাশ স্বজনরা গ্রহণ না করলে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে। ১ জুলাই হামলার পরদিন সকালে হলি আর্টিজান জঙ্গিমুক্ত করতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। অভিযান শুরুর আগেই সেখানে ১৭ বিদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। আর কমান্ডো অপারেশন থান্ডারবোল্টে নিহত হন ওই পাঁচ জঙ্গি। অভিযানের পরপর সবার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মর্গের ফ্রিজে রাখা হয় লাশগুলো। এরই মধ্যে জঙ্গিদের হাতে নিহতদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে। তবে পাঁচ জঙ্গির লাশ এখনো রয়ে গেছে মর্গের ফ্রিজে। গতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা শেষে লাশগুলো দাফনের জন্য আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা করা সম্ভব হয়নি। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাকরাইল অফিসে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার জিল্লুর রহমান নামে এক কর্মচারী জানান, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কারও লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। পুলিশের বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ এখনো সিএমএইচে রাখা আছে। তাদের স্বজনরা লাশ না নিতে আসায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

হাসনাতের খোঁজে আইজিপি ও ডিএমপিতে বাবা রেজাউল : গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে কমান্ডো অভিযানের পর ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আবুল হাসনাত রেজা করিমের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা রেজাউল করিম। ঘটনার ৯ দিন পরও তিনি বাসায় ফেরেননি বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তাতে উদ্ধার তালিকায় নাম থাকলেও আসামির তালিকায় নেই তার নাম। হাসনাত করিমকে খুঁজে না পাওয়ায় এবং তাকে ছেড়ে দিতে বা খুঁজে দিতে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ও ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামানকে গত রবিবার চিঠি দেন তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ছেলের সন্ধান চেয়ে চিঠি দিয়েছি। জানা গেছে, গুলশানের ওই রেস্টুরেন্টে গত ১ জুলাইয়ের জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাতের বিরুদ্ধে হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে হাসনাতকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। রেস্টুরেন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে যে পাঁচ হামলাকারী নিহত হয় তাদের মধ্যে নিবরাস ইসলামও ঢাকার এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। অভিযান শুরুর আগের এক ভিডিওতে রেস্টুরেন্টের দরজায় দেখা যায় হাসনাত রেজা করিমকে। কিছুক্ষণ পর রেস্টুরেন্ট থেকে হাসনাত করিম সপরিবারে বেরিয়ে আসেন। গুলশানের হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জীবিত অবস্থায় যে ৩২ জনকে উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে তাতে হাসনাতকেও জীবিত উদ্ধার হিসেবে দেখানো হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ তদন্তের স্বার্থে হাসনাত করিমকে কয়েকবার ডেকেছিল। আর এ বিষয়ে তিনি নিজেও ডিবির কাছে তথ্য দিয়ে গেছেন। এমনকি ঈদের পরের দিনও তিনি স্বেচ্ছায় এসে পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন। প্রয়োজনে পুলিশ তাকে আবারও ডাকবে। জানতে চাইলে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসনাত পুলিশের কোনো সংস্থার হেফাজতে নেই।

সর্বশেষ খবর