মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণদের কাউন্সেলিং করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তরুণদের কাউন্সেলিং করতে হবে

মওলানা জিয়াউল হাসান

বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট সভাপতি হাফেজ মওলানা জিয়াউল হাসান বলেছেন, জঙ্গিবাদ ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সমাজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তীব্র হতাশায় শিক্ষিত তরুণরা এই জঙ্গিবাদে জড়িত হচ্ছে। মানুষ খুন করছে। এটা কোনো ইসলামের পথ নয়। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরকালের অশেষ লোভ দেখিয়ে এসব তরুণকে ভেড়াচ্ছে ভয়ঙ্কর পথে। এটা বন্ধ করতে যার যার অবস্থান থেকে কাউন্সেলিং করতে হবে। মসজিদ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং করতে হবে। সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।  গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে জিয়াউল হাসান বলেন, ‘দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাই জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সমাজের উচ্চবিত্ত ইংলিশ মিডিয়ামের তরুণ শিক্ষার্থীরা এমন ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। দুটি কারণে এই তরুণরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকছে বলে আমার মনে হয়। এক, পরিবার থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকে এরা। পিতা-মাতা নিজের কাজে ব্যস্ত থাকায় সারা দিন একাই থাকে। সারা দিন একাকিত্বে ভোগা এসব সন্তান হয়তো বড় হয় কাজের লোকের তত্ত্বাবধানে। দিনের বেলায় কোথায় যায় তাদের পিতা-মাতা জানে না। আবার রাতে বাসায় এসে তারা কম্পিউটার ল্যাপটপে সময় কাটায়। ফলে পরিবারের যে বন্ধন ভালোবাসা তারা কখনোই পায় না। এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের তীব্র হতাশা বোধ কাজ করে। এই হতাশা বোধ থেকে তারা ভয়ঙ্কর পথে চলে যায়। দুই, একাকিত্বে ভোগা এসব তরুণকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা আড্ডায় জঙ্গিবাদি কেউ ইসলামের ভুল, মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে পরকালের লোভ দেখায়। যারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের দলে ভেড়ায়। এসব তরুণ সমাজ কিংবা পরিবার থেকে ইসলাম বা ধর্মের কোনো কথা জানেই না। দেখা যাবে তারা হয়তো সুরা ফাতিহার অর্থই জানে না। ফলে তাদের ভুল ব্যাখ্যা বোঝানো খুব সহজ।

তিনি বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অভাব-অনটনে বড় হয়। তাদের জীবনযাপনে অভাব-অনটন থাকে। তারা হয়তো কিছু টাকার লোভে যেতে পারে। কিন্তু উচ্চবিত্ত সন্তানরা যখন যায় তখন বুঝতে হবে অর্থের লোভে তারা যায়নি। নিশ্চয়ই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের প্রভাবিত করা হয়েছে। জিয়াউল হাসান বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব আছে। দেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় আরও আধুনিকায়ন করতে হবে। এখনো অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না। একই সমস্যা কিন্তু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে আছে। জাতীয় পতাকা দেখে একটি শিশু তার পিতা-মাতার কাছে জানতে পারে পতাকা সম্পর্কে। তারা জানতে পারে মুক্তিযুদ্ধ, দেশ, সমাজ সম্পর্কে। তাদের মধ্যে একটি দায়িত্ববোধ তৈরি হয়। এখন দেখা যাচ্ছে নিজের পিতা-মাতা সম্পর্কে তাদের কোনো দায়িত্ব বোধ জন্মাচ্ছে না। যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে তারা চিন্তা করছে না মৃত্যুর পর তাদের পিতা-মাতার কত সমস্যা হতে পারে। পিতা-মাতা রাষ্ট্র, সমাজের চোখে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। এই ভালোবাসা সন্তানদের মধ্যে জন্মালো কেন? এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্য আমাদের যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের উচিত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ধর্মের মানবিক দিক তুলে ধরে মোটিভেশন করা। মানুষ হত্যা করা কখনোই ইসলামের মত হতে পারে না—এই শিক্ষায় সবাইকে জাগ্রত করা। দেশের সব মসজিদের খুতবা, বয়ানে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে। সবাইকে মোটিভেট করতে হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। পরিবারের মধ্যেও বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসনে সঠিক ব্যাখ্যা সন্তানদের দিতে হবে। তাহলেই সম্ভব জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হবে। তাত্ক্ষণিক বেহেশতের লোভ কীভাবে একজন মানুষকে পেতে পারে। নিজের ঘর, পিতামাতার যে ভালোবাসা এটাই তো বেহেশত। সেটাকেই সন্তানদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

সর্বশেষ খবর