বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঢাকায় বৈঠকের পর বৈঠক করে ফিরে গেলেন নিশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় বৈঠকের পর বৈঠক করে ফিরে গেলেন নিশা

জঙ্গি হামলার তদন্ত এবং পরবর্তী হামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক করে ফিরে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল দুপুরে কলম্বো রওনা হওয়ার আগে এক টুইটার বার্তায় তিনি জঙ্গি হামলা তদন্ত এবং তা মোকাবিলায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন। আরেক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরা জঙ্গি হামলার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তারা বাংলাদেশের পাশে থাকতে চান। ঢাকা সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে টুইটার বার্তায় বিসওয়াল লেখেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর শেষ করলাম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি আমি জানিয়েছি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত সন্ত্রাসীরা বিজয়ী হবে না। আমাদের কাছে গোয়েন্দা তত্পরতা এবং তথ্য আছে। যারা আমাদের সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদেরকে পরাজিত করার মতো প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা আমাদের কমিউনিটি এবং তরুণদের নিয়ে কাজ করব, যাতে তারা সঠিক পথ খুঁজে পায়। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর রবিবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। সোমবার দিনভর প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গেও আলাদাভাবে বৈঠক করেন নিশা দেশাই। এ বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শ?া ব্লুম বার্নিকাট ও যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মার্ক ক্লেটন ছাড়াও গুলশান হামলার পর যৌথবাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এর অপারেশনাল হেড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাব্বির ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার সকালে গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বাসভবনে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন নিশা দেশাই। এরপর বেলা ১১টার দিকে তিনি গুলশান হলি আর্টিজান হোটেলে যান এবং সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানান। সবশেষে বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নিশা দেশাই। ফিরে যাওয়ার আগে গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বাসভবনে ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গেও বৈঠক করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে নিশা দেশাই তার চলতি সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার তার অতীতের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গিয়ে মেনে নিচ্ছে যে, এই সব হামলার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের একটি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তিনি মনে করেন, জঙ্গিবাদ, তা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন মোকাবিলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বৈঠকসূত্র আরও জানায়, নিশা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সরকার বলেছে, অভ্যন্তরীণভাবে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় কী কী সামর্থ্য রয়েছে তা যাচাই করে নিয়েই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের এই হুমকি বৈশ্বিক, বৈশ্বিকভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বৈঠকে সিনিয়র সাংবাদিকরা বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট, দেশে এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ রয়েছে। এ অবস্থার নিরসনে সরকারের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরই মত দেন তারা। সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা বলেন, এর বাইরে কৌশলগত কোনো সহায়তা কতটুকু ও কীভাবে নেওয়া যায় তা সরকার নির্ধারণ করবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে জঙ্গি হামলা কিংবা তত্পরতায় ক্রাইসিস পিরিয়ডে মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কেমন হওয়া উচিত, মিডিয়ার কেমন ভূমিকা পালন করা উচিত সে নিয়েও কথা হয়। মিডিয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেন তারা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকারের কিংবা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিয়মিত ব্রিফিং করার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে।

সর্বশেষ খবর