বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অভিভাবকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

ছেলেমেয়েদের প্রতি খেয়াল রাখুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, তার খোঁজখবর নেবেন। তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। কোনো ছেলেমেয়ে নিখোঁজ হলে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিন, স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। গতকাল গণভবনে এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ইসলাম ধর্মকে যেন কেউ কলুষিত করতে না পারে সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। কোনো জঙ্গির স্থান, সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুরে ঢাকা ও ময়মনসিংহের এবং বিকালে রংপুর, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। জঙ্গি হামলায় উচ্চশিক্ষিতদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা উচ্চশিক্ষিত, ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াশোনা করছে, সেই ছেলেমেয়েরা কীভাবে ধর্মান্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যায় পরিবার থেকে? অথচ আঙ্গুল তোলা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের ওপর। এ নিয়ে রিপোর্ট দিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এখন দেখা যায় অনেকে স্বেচ্ছায় গুম হয়ে এ ধরনের কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, তাহলে কিসের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো রিপোর্ট দিত? তারা কি একটুও খোঁজখবর নেয় না! প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ সবাই যেন নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করেন। এ বিষয়ে বিশেষ করে মা-বাবা যেন সজাগ থাকেন। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে তার খোঁজখবর নেবেন। তাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরাও খোঁজখবর রাখবেন। প্রত্যেক ইউনিয়ন, থানায় জঙ্গি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কমিটিগুলো কারও জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলে তা খুঁজে বের করবে। কমিটির মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইসলামের নাম করে মানুষ হত্যা করছে, তারা আমাদের পবিত্র ধর্মের বদনাম করছে দেশে-বিদেশে। আমাদের ধর্মে আছে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু তারা রমজানে তারাবি না পড়ে, ঈদের দিন ঈদের নামাজ না পড়ে মানুষ মারছে। পবিত্র ধর্ম ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কল্যাণে কাজ করতে চাই, এটাই আমাদের লক্ষ্য। শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সর্বস্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিমুক্ত করতে পারব। সবাই একযোগে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে পারবে না। বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বাসনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। এ লক্ষ্যে নানা প্রকল্প রয়েছে, সেখানে বিদেশিরা কাজ করেন। তাদের নিরাপত্তা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এলাকার মানুষ এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করবে। সরকার দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন বলেই এসব কাজ সম্ভব হচ্ছে। দেশবাসীও সমর্থন করছেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। চার বিভাগের জেলাগুলোর  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, ইমাম, পুলিশ সুপার, মেয়রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

সর্বশেষ খবর