বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুসলমান হয়েই জঙ্গি তৎপরতায় ওরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুজিত জঙ্গি সাইফুল্লাহ ► চট্টগ্রামের পিকুল দাশ এখন মুছা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

মুসলমান হয়েই জঙ্গি তৎপরতায় ওরা

সরকার ঘোষিত নিখোঁজ ১০ জঙ্গির মধ্যে একজন জাপান প্রবাসী ধর্মান্তরিত মুসলিম বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। ১০ জনের ওই তালিকায় থাকা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির ছবি দেখে তাকে নিজের ছেলে সুজিত দেবনাথ বলে শনাক্ত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ী গ্রামের জনার্ধন দেবনাথ।

এ ছাড়া গত সোমবার চট্টগ্রামের গ্রেফতার হওয়ার আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সদস্যের মধ্যেও একজন ধর্মান্তরিত মুললিম আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পিকুল দাশ নামের ওই যুবকের বর্তমান নাম মুছা ইবনে উমায়ের। ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন মুছা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন—মুসলমান হয়ে তারা জঙ্গি তত্পরতায় জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেই পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তারা। এদিকে নিখোঁজ অন্য জঙ্গিদেরও  খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুজিত দেবনাথই জঙ্গি সাইফুল্লাহ : সরকার ঘোষিত ১০ জঙ্গির মধ্যে একজনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ুইবাড়ী গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী জনার্ধন দেবনাথের ছেলে সিলেট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র সুজিত দেবনাথ (৩৫)। তিনিই হচ্ছেন গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকাভুক্ত নিখোঁজ খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি। জানা গেছে, তিনি এখন জাপান প্রবাসী। তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

সুজিতের বাবা জনার্ধন দেবনাথ বলেন, ‘১৪ মাস আগে জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফের বাসায় এসে সুজিত আমাদের খবর দিলে আমরা সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করি। সুজিত জাপান চলে যাওয়ার পর এক বছর আগে ফোনে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তবে সে নিখোঁজ কি না তা আমরা জানি না।’ তিনি বলেন, ‘জিনদপুর ইউনিয়নের হুরুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে একই উপজেলার লাউর ফতেহপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে সুজিত। এরপর সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে ২০০৩ সালে জাপান সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে সে দেশের এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করে।’

লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী সুজিত ওরফে সাইফুল্লাহ ওজাকীর পাসপোর্ট নম্বর টি কে ৮০৯৯৮৬০। সুজিত জাপানেই হিন্দু থেকে ইসলামধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে জাপানি এক মেয়েকে বিয়ে করে খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি নাম ধারণ করেন। বর্তমানে তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক বলে জানা গেছে। জিনদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ বলেন, ‘সুজিতকে ছোটবেলা থেকেই চিনি। পরে জানতে পারি সে জাপানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ ১৪ মাস আগে সে আমার এখানে এসে তার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে গেছে। তবে সে তার বাড়িতে যায়নি এবং মা-বাবার সঙ্গে দেখা করে এক ঘণ্টা পরই ঢাকায় চলে যায়। এর পর থেকে তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই।’ এদিকে এক বছর ধরে সুজিত ওরফে ওজাকীর কোনো খোঁজ না থাকলেও এ নিয়ে নিখোঁজ হওয়ার জন্য কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেনি তার পরিবার। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, ‘থানায় সুজিতের নামে কোনো জিডি নেই। তবে কয়েক মাস আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ থেকে মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকির নাম-ঠিকানা যাচাইকরণের জন্য বলা হয়েছিল। আমরা তদন্ত করে নাম-ঠিকানা যাচাই করে পাঠিয়েছি।’

এবিটিতে যোগ দিতে ধর্মান্তরিত!: গত ১১ জুলাই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু থেকে গ্রেফতার হওয়া চার এবিটি সদস্যের মধ্যে মুছা ইবনে উমায়ের ধর্মান্তরিত মুসলিম বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুছার আগের নাম ছিল পিকুল দাশ। চাকরি করেন সিইপিজেডে একটি বিদেশি পোশাক তৈরি কোম্পানিতে। দুই বছর আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নতুন নাম ধারণ করেন মুছা ইবনে উমায়ের। একই সময়ে তিনি এবিটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে এ সংগঠনটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বায়তুল মাল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গ্রেফতার হওয়া মুছার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামে। তার বাবার নাম অরুণ কান্তি দাশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবিটিতে যোগদান দিতেই মুছা ওরফে পিকুল ধর্মান্তরিত হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান মুছা।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু থেকে গত ১১ জুলাই আটক আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্যের মধ্যে মুছা ইবনে উমায়ের (২৫) ধর্মান্তরিত হয়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, মুছা হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। পুলিশ আরও জানায়, মুছা সিইপিজেডে একটি গার্মেন্টে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত আছেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর মুছা পরিবার থেকে বিচ্যুত হয়ে যান। আগে তার নাম ছিল পিকলু দাশ। রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর চট্টগ্রামেও বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল মুছাসহ গ্রেফতার অন্য জঙ্গিদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর