শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হত্যার আগে শক্তিবর্ধক ড্রাগ নিয়েছিল জঙ্গিরা!

গুলশানে জঙ্গি হামলা - তিন ল্যাবে হবে ভিসেরা পরীক্ষা

আলী আজম

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত পাঁচ জঙ্গির ভিসেরা পরীক্ষা তিনটি ল্যাবে করা হবে। ইতিমধ্যে নিহত জঙ্গিদের রক্ত, কিডনি, লিভার ও পাকস্থলী থেকে পরীক্ষার জন্য কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে তা পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। হত্যার আগে জঙ্গিরা শক্তিবর্ধক কিছু খেয়েছিল কিনা বা কোনো ড্রাগ নিয়েছিল কিনা ভিসেরা পরীক্ষায় এটিই গুরুত্ব পাচ্ছে।

জঙ্গিদের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (এফবিআই) আবেদন করেছে। তবে তাদের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ৫ জুলাই নিহত পাঁচ জঙ্গির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ২০ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা। হত্যাকাণ্ডের সময় জঙ্গিরা শক্তিবর্ধক কিছু খেয়েছিল কি না বা ড্রাগ নিয়েছিল কি না তা নিরূপণে তাদের শরীরের কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য সিআইডি ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট আলামত নিয়ে গেছে। ঢামেকের নিজস্ব ল্যাবেও আলামত পরীক্ষা  করা হবে। ভিসেরার প্রতিবেদন পেতে দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তখনই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে। সবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত জিম্মি নারীদের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট করা হয়েছে কি না এ জন্য হাই ভ্যাজিনাল সোয়াব সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা পরীক্ষার জন্য ঢামেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, মহাখালী রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এ রিপোর্ট পাওয়া যেতে পারে। ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, জঙ্গিদের হামলায় নিহত ২০ জনের মধ্যে ১০ জনই নারী। জঙ্গিরা নারীদের ওপরই বেশি বর্বরতা চালায়। এদের মধ্যে ভারতীয় এক নারী এবং জাপানি এক পুরুষকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। দুজনের শরীরে পৃথকভাবে অন্তত ৪০টি ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদের দুই হাত, মাথা, বুক ও পিঠে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নৃশংসভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। ডেডিকেটেড ও অত্যধিক ক্ষোভ ছাড়া এমন হত্যা সম্ভব নয়। হামলার ধরনে বলছে, কতটা হিংস্র ও বর্বর ছিল জঙ্গিরা। চিকিৎসক ও তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত ১০ নারীর ওপরই সবচেয়ে বেশি বর্বর হামলা চালায় জঙ্গিরা। তারা নারীদের ওপর বেশি ক্ষুব্ধ ছিল। যে কায়দায় নৃশংসভাবে জঙ্গিরা ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে, তা বর্ণনাতীত। নিহত ১৭ বিদেশি নাগরিকের মধ্যে সাতজনের শরীর থেকে আটটি বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের শরীরে দুটি বুলেট ছিল। কারও বা শরীর ভেদ করে বুলেট বেরিয়ে গেছে। একজন জাপানি নাগরিকের মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। সাত বিদেশি নাগরিককে পেছন দিক থেকে মাথায় গুলি করা হয়। এক বিদেশি বাদে সবার শরীরে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। অনেকের একই জায়গায় বারবার কোপানো হয়েছে। ফারাজ হোসেনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। তার হাতে ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত আরও দুই বাংলাদেশি নারী ইশরাত আখন্দ ও অবিন্তা কবিরের শরীরে কোপানোর একাধিক চিহ্ন এবং মাথায় জখম ছিল। নিহত পাঁচ জঙ্গি ও এক শেফের সবার শরীরে ছিল গুলির চিহ্ন। তাদের মধ্যে তিন জঙ্গির শরীর বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে। জঙ্গি হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে ডিবির এসি রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন খান নিহত হন। রবিউলের বুকের ডান পাশে এবং সালাউদ্দিনের গলায় স্প্লিন্টার ঢুকে গেছে। দুজনই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে মোট ২৮ জন নিহত হন। জঙ্গিদের হামলায় প্রথমে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। রাত ১২টার মধ্যে ২০ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরদিন সকালে পাঁচ জঙ্গি ও বেকারির শেফ মারা যায়। নিহতদের লাশের প্রথমে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে একটি দল গঠন করা হয়। ৪ জুলাই নিহত ২০ জনের ময়নাতদন্ত ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) করা হয়। ওই দিন সকালে দুই পুলিশ কর্মকর্তার ময়নাতদন্ত করা হয় ঢামেক মর্গে। ৫ জুলাই নিহত পাঁচ জঙ্গি ও বেকারির শেফের লাশের ময়নাতদন্ত করা হয় সিএমএইচে। হলি আর্টিজান বেকারির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, গতকাল নিহত পাঁচ জঙ্গির আলামত ভিসেরা পরীক্ষার জন্য ঢামেক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে তা পরীক্ষার জন্য মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এর আগে নিহত ২০ জনের ভিসেরা রিপোর্ট এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনে জঙ্গিদের আলামত পরীক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর