শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হত্যাকাণ্ডের সময় তিন দেশে যোগাযোগ করে জঙ্গিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞের সময় জঙ্গিরা তিন দেশে যোগাযোগ করে। হামলার রাতে এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলেও বিদেশি অ্যাপস ব্যবহার করে যোগাযোগ করে জঙ্গিরা। অ্যাপসের সহযোগিতায় হামলার বেশকিছু ছবি ও ভিডিও আপলোড করে পাঠানো হয়। যা সাইট ইন্টিলিজেন্সে প্রকাশ করা হয় রাতেই। এদিকে আর্টিজানের আশপাশের সিসিটিভির অস্পষ্ট ভিডিও ফুটেজ প্রিন্টের জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এসব তথ্য দিয়ে বলেছে, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও লন্ডনের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে। আরও কোনো দেশে যোগাযোগ করেছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। জঙ্গিদের স্যাটেলাইট মোবাইলও ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই তিন দেশের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে বিদেশি কারিগরি সহযোগিতা নেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।

মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান থেকে মুক্তি ও উদ্ধার হওয়া ৩৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করা হয়েছে। জঙ্গিদের চিহ্নিত কয়েকজন বড়ভাইকে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ১০-১২ জন জঙ্গিকে ধরা হয়েছে। যারা জেএমবি ও এবিটির সদস্য। চিহ্নিত আরও কয়েক জঙ্গিকে ধরতে পারলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। বেরিয়ে আসবে নেপথ্যে কারা ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, মূল হামলাকারী জঙ্গিরা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। তবে তাদের পেছনে সহযোগী হিসেবে আরও একটি জঙ্গি গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপের বেশ কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বেশ কয়েকজন নজরে রয়েছে। এ হামলার ঘটনা তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হামলার সময় জঙ্গিরা বিদেশে যোগাযোগ করার বিষয়টি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছ থেকে জানা গেছে। তবে তিন দেশের কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বা আরও কোনো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিনা, তা জানতে বিদেশি কারিগরি সহযোগিতার প্রয়োজন। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র , সিঙ্গাপুর ও ভারতের কারিগরি সহযোগিতা নেবে সরকার। জঙ্গিরা যেসব ছবি, ভিডিও আপলোড করেছে সেগুলোর আইডি ট্র্যাক করার উপযুক্ত প্রযুক্তি দেশে নেই। এ ছাড়া ঘটনার আলামতের অধিকতর উন্নত ফরেনসিক টেস্টের জন্যও বিদেশি কারিগরি সহযোগিতা দরকার। সূত্র জানায়, হলি আর্টিজান থেকে যেসব আলামত উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে একটি সাদা রুমাল রয়েছে। রুমালে লেখা ছিল দাওয়াতুল ইসলাম বাংলাদেশ। এটি নতুন কোনো জঙ্গি সংগঠন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে নতুন কোনো সংগঠনের ব্যানারে এ হামলা চালিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে পুলিশপ্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারীরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। এ হামলার সঙ্গে আইএসের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। এ ছাড়া হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্যও। আহত হন ৩০ পুলিশ সদস্য। ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর