রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জনস্রোতে ভেসে গেল সেনা অভ্যুত্থান

রক্তাক্ত তুরস্ক । নিহত ২৬৫ । রাষ্ট্রপতির আহ্বানে রাজপথ দখলে নিল জনগণ

তৌহিদুল ইসলাম, আঙ্কারা (তুরস্ক) থেকে

জনস্রোতে ভেসে গেল সেনা অভ্যুত্থান

সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার বিরুদ্ধে এভাবেই রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তুরস্কের সাধারণ মানুষ —সিএনএন

জনস্রোতে ভেসে গেছে তুরস্কে ডানপন্থি সরকারকে হটাতে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। সরকারের পক্ষে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ। পুলিশ আটক করছে বিদ্রোহী সেনাসদস্যদের। রাতভর নানা নাটকীয় ঘটনার পর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে ফেরত পেয়ে অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। শুক্রবার সারা রাত ধরে চলা এই রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে অভ্যুত্থানের পক্ষে-বিপক্ষের সেনাসদস্য ছাড়াও রয়েছেন পুলিশ ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া আহত হয়ে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অন্তত এক হাজার ১৫৪ জন। শুক্রবার তুরস্কের স্থানীয় সময় এশার নামাজের পর থেকে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশ। এ সময় ইস্তানবুলের এশীয় ও ইউরোপীয় অংশের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সেতুগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তারা দখল করে নেয় সরকারি টেলিভিশন টিআরটিসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়া প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস ও পার্লামেন্টের সামনে মোতায়েন করা হয় ট্যাঙ্ক। অভ্যুত্থানকারী সেনাসদস্যরা হামলা চালায় আঙ্কারার পুলিশের বিশেষ বাহিনী এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়েও।

তবে সামরিক বাহিনীর সরকারপন্থি অংশ এবং রাজপথে নেমে আসা জনতার তত্পরতায় কয়েক ঘণ্টার বেশি টিকতে পারেনি বিদ্রোহী সেনারা। গতকাল সকালের দিকেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার আলামত ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইস্তানবুল ও রাজধানী আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে ধীরে ধীরে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন অভ্যুত্থানকারী সেনাসদস্যরা। আঙ্কারায় তুরস্কের আর্মি হেডকোয়ার্টারে পুলিশের কাছে একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন অভ্যুত্থানকারী ২০০ সেনা কর্মকর্তা। অভ্যুত্থানে জড়িত অভিযোগে এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৬৩ জনকে আটক করেছে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ, যাদের বেশির ভাগই সেনাসদস্য। তাদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন জেনারেল ও ২৯ জন কর্নেল পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানা গেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান গতকাল ইস্তানবুলে পৌঁছে বিমানবন্দরে এক ভাষণে বলেছেন, অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীরা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। রাজপথে অভ্যুত্থানকারীদের কর্তৃত্ব হারানোর প্রকাশ ঘটলেও তাদের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় বলা হয়েছে, লড়াই চালিয়ে যাবেন তারা। প্রেসিডেন্ট এরদোগান অবকাশে থাকার মধ্যেই শুক্রবার বিকালে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশটির পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর একটি দল অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেওয়ার দাবি করে, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাজধানী আঙ্কারা এবং দেশটির বৃহত্তম শহর ইস্তানবুলে ট্যাঙ্ক নামে, পথে পথে পাহারায় বসেন বিপথগামী সেনাসদস্যরা। সরকারি বিভিন্ন ভবনের নিয়ন্ত্রণও নেন তারা। উপকূলবর্তী শহর মারমারিসে থাকা এরদোগান অভ্যুত্থানের খবর পেয়েই জনগণকে তা প্রতিরোধের আহ্বান জানান। এরপর তড়িঘড়ি করে তিনি ইস্তানবুল পৌঁছে এক ভাষণে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ক্ষুদ্র একটি দল অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল। তারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছে। এজন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।’ অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর কামাল আতাতুর্ক প্রতিষ্ঠিত আধুনিক তুরস্কে গত এক যুগের ডান শাসনে সেনাবাহিনীর বহু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়, যা নিয়ে সামরিক বাহিনীতে ক্ষোভ রয়েছে। তবে অভ্যুত্থানচেষ্টার নেতৃত্বে কারা ছিলেন কিংবা তাদের পেছনে কারও সমর্থন ছিল কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারকে বিদ্রোহীরা আঙ্কারায় জিম্মি করে বলে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা আনাদলুকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বিবিসি। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদারকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারী সেনারা এ অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য স্বেচ্ছা-নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে দায়ী করেছেন খোদ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানও। তবে গুলেনের হিজমেত আন্দোলন এ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংস্রবের কথা অস্বীকার করেছে। এ ধরনের অভিযোগকে ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, হিজমেত আন্দোলন সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে না। ১৯৪১ সালের ২৭ এপ্রিল জন্ম নেওয়া গুলেন একজন সাবেক ইমাম ও লেখক। তিনি গুলেন আন্দোলনের জনক। তুরস্কে এ আন্দোলন হিজমেত আন্দোলন নামে পরিচিত। শুক্রবার ভূমধ্যসাগরীয় অবকাশ যাপন কেন্দ্র মারমারিসে ছুটি কাটাচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সেখান থেকেই জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে রাতের মধ্যেই ইস্তানবুলে ফেরত আসার অঙ্গীকার করেন প্রেসিডেন্ট। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাতের মধ্যেই রাজপথে নামে জনস্রোত। অন্যদিকে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা এমআইটি ছাড়াও পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এর মধ্যেই গতকাল ভোরে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। সেখান থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। ভাষণ দানকালে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে এর হোতাদের কঠোর পরিণতির মুখোমুখি করার হুঁশিয়ারি দেন এরদোগান।

প্রেসিডেন্টের এ ভাষণের পরপরই একে একে আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেন বিদ্রোহী সেনারা। তবে কোনো কোনো জায়গায় অভ্যুত্থানকারীরা সরকারপন্থিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রাণহানির সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে।

এদিকে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরুর পরপরই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তুরস্কের সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারের। এ অবস্থায় দেশের ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল উমিত দুনদারকে নিয়োগ দেয় সরকার। জানা গেছে, শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরুর পরপরই বিদ্রোহী সেনাদের একটি গ্রুপ জেনারেল হুলুসি আকারকে জিম্মি করে আঙ্কারার একিনসিলার বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়। তবে গতকাল সকালে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। দেশটিতে ১৯৬০ সালে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। সে সময় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারকে উত্খাত করতে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী। ফাঁসিতে ঝোলানো হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আদনান মেনদারসকে। ১৯৭১ সালে আরেক দফা অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী। তবে এ দফা সরকার গঠন করেনি তারা। ১৯৮০ সালে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দুই বছরের শাসনকালে শ’খানেক লোককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি বহু লোকের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এ সময় নিখোঁজ হন অনেক লোক। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য করে ফের আলোচনায় আসে ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী।

হঠাৎ রাজপথে ট্যাঙ্ক : সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার দীর্ঘ ইতিহাস আছে তুরস্কের। ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ অভ্যুত্থানে ডানপন্থি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। তবে এবার কোনো ধরনের আভাস না পাওয়ার মধ্যেই আঙ্কারা ও ইস্তানবুলের সড়কে ট্যাঙ্ক দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন তুরস্কবাসী। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনী রাজপথে অবস্থান নেয়। তারা ইস্তানবুলের বসফরাস ও সুলতান মেহমুদ সেতুর ওপর অবস্থান নিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় রাজপথে নেমে আসেন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সেনাসদস্যরা। সিএনএন, তুর্ক টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও নেন বিদ্রোহী সেনারা। এরদোগানের দল এ কে পার্টির ইস্তানবুলের দফতরেও হানা দেন বিদ্রোহী সেনাসদস্যরা। এ সময় রাজধানী আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে গুলির শব্দ শোনা যেতে থাকে। আকাশে চক্কর দিতে থাকে সামরিক বাহিনীর বিমান। সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণ হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ইস্তানবুলের আকাশেও হেলিকপ্টার উড়তে থাকে। সেখানকার আতাতুর্ক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। আঙ্কারায় পার্লামেন্ট ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন পার্লামেন্ট সদস্যরা। সেখানে বিদ্রোহী সেনারা ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছোড়ার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পার্লামেন্ট ভবনে আশ্রয় নেওয়া একজন বিরোধী নেতা রয়টার্সকে বলেন, অন্তত তিনবার গোলা ছোড়া হয় এবং এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এরপর স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে রাষ্ট্রীয় টিভি টিআরটিতে খবর আসে, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং সান্ধ্য আইন ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।

ক্ষমতা দখলের দাবি : এ পর্যায়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থি সরকারকে উত্খাতের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটির পরাক্রমশালী সেনাবাহিনীর একটি বিবৃতি উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানায়। ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে বলে বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে টিভি চ্যানেলগুলোর খবরে বলা হয়। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন ‘শান্তি পরিষদ’ দেশ চালাবে এবং সান্ধ্য আইন ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে বলে এতে বলা হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সেতুও তাদের দখলে। রাস্তায় নেমেছে ট্যাঙ্ক। আকাশে চক্কর দিতে থাকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার। উড়তে থাকে জঙ্গিবিমান।

অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনাপ্রবাহ : তুরস্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভ্যুত্থানকারীরা ইস্তানবুলের বসফরাস সেতু ও ফাতিহ সুলতান মেহমুদ সেতু বন্ধ করে দেয়। দোগান নিউজ এজেন্সির ফুটেজে গাড়ি ও বাসকে অন্য পথে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দেখানো হয়। রাত ৮টার দিকে আঙ্কারায় গুলির শব্দ শোনা যায়। সামরিক জেটবিমান ও হেলিকপ্টারগুলোকে আকাশে চক্কর দিতে দেখা যায়। ইস্তানবুলের আকাশেও সামরিক হেলিকপ্টার দৃশ্যমান হয়। এর পরপরই তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুর্কি সামরিক বাহিনীর একটি গোষ্ঠী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে ‘যা করণীয় তা করতে’ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ডাকা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টায় অভ্যুত্থানকারীরা ঘোষণা দিয়ে জানায়, গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এবং তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখা হবে। এর পরপর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, আঙ্কারায় সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের মধ্যে তুর্কি সামরিক বাহিনীর প্রধানও আছেন। রাত ৯টায় রয়টার্স জানায়, আঙ্কারায় টিআরটি ভবনে সেনারা অবস্থান নিয়েছেন। একই সময় তুরস্কের ক্ষমতাসীন এ কে পার্টির ইস্তানবুল কার্যালয়ে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করেন এবং সেখানকার নেতা-কর্মীদের চলে যেতে বলা হয়। কাছাকাছি সময়ে বিদ্রোহী সেনাদের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে সামরিক ও সান্ধ্য আইন জারির ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে এর পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ও সরকার এখনো ক্ষমতায় আছেন। রাত সাড়ে ৯টায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান ‘সামরিক বাহিনীর একটি সংখ্যালঘু দলছুট অংশের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার’ বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। সিএনএন-তুর্কির এক সাংবাদিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনের ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ রাজধানী আঙ্কারায় ফিরে আসছেন বলেও তিনি জানান। এর কিছু সময় পর রাজধানী আঙ্কারায় একটি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে গুলির্বষণ করেন বিদ্রোহীরা। এ সময় রাজধানীতে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর কিছু সময় পর সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্কগুলো তুর্কি পার্লামেন্ট ভবন ঘিরে ফেলে এবং গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ইস্তানবুল বিমানবন্দরে গুলির শব্দ শোনা যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানী আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে দুটি ভারী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাত ১১টার দিকে তুরস্কের এনটিভি জানায়, দেশটির যুদ্ধবিমানগুলো আঙ্কারার আকাশে অভ্যুত্থান পরিকল্পনাকারীদের ব্যবহার করা সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে নামিয়েছে। কাছাকাছি সময় তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, আঙ্কারার স্পেশাল ফোর্সের সদর দফতরে ১৭ পুলিশ নিহত হয়েছেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, আঙ্কারার পার্লামেন্ট ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ ছাড়া রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ইস্তানবুলে বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন বলে জানান।

অভ্যুত্থান যেভাবে ব্যর্থ হলো : শুক্রবার রাতে যখন অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন কয়েক ঘণ্টা ধরে দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই মনে হচ্ছিল। রাজধানী আঙ্কারা আর সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তানবুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে ছিল তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দখল করে নেয় অভ্যুত্থানকারীরা। একপর্যায়ে এগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এত ঘটনার মধ্যে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট এরদোগানের। অভ্যুত্থানকারীদের সেই মুহূর্তে দরকার ছিল সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ অংশের এবং জনগণের সমর্থন। কিন্তু অভ্যুত্থানচেষ্টা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম তা প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেছেন। তবে তুরস্কের বেশির ভাগ মানুষ জানে, প্রকৃত ক্ষমতা আসলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের হাতে এবং কিছু করতে হলে তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। অভ্যুত্থান সফল হতে হলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। শুরুতে বোঝা যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোথায় আছেন। কোনো কোনো খবরে বলা হচ্ছিল, তিনি তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে আছেন এবং সেখানে তাকে জিম্মি করা হয়েছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে দেখা গেল সিএনএনের তুর্কি ভাষার নিউজ চ্যানেলে। মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার আহ্বান জানান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এরদোগান এক টুইট বার্তায় জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার উত্খাতের এ চেষ্টা রুখে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনছে সরকার। এরপর সিএনএন-তুর্ক টেলিভিশনে এরদোগানের এক ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রচারের পর দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। সরকার সমর্থকরা ইস্তানবুল ও আঙ্কারার রাজপথে নেমে আসেন। পুলিশও অবস্থান নেয় সড়কগুলোতে। অন্যদিকে সামরিক বিমানগুলো থেকে বিদ্রোহী সেনাদের হেলিকপ্টারে গুলি ছোড়া শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেওয়া সেনাসদস্যদের হাত উঁচু করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। আর ট্যাঙ্কগুলোতে জাতীয় পতাকা নিয়ে উঠে পড়েন উল্লসিত সরকার সমর্থকরা। ইস্তানবুলে সেতুতে আত্মসমর্পণকারী সেনাসদস্যদের ওপর এরদোগানের এ কে পার্টির সমর্থকদের হামলার খবরও প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রয়টার্স। এরপর ভোররাতে ইস্তানবুলে ফিরে এরদোগান সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমি পালাইনি, আমি জনগণের সঙ্গেই আছি।’ ইস্তানবুল বিমানবন্দরে তিনি যখন টেলিভিশনে কথা বলছিলেন, তখন তার চারপাশ ঘিরে ছিলেন উল্লসিত কর্মী-সমর্থকরা। ‘আমি ক্ষমতায় আছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে’ বলেও জনগণকে আশ্বস্ত করেন এরদোগান। প্রেসিডেন্ট এরদোগান যখন ইস্তানবুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নামেন, পরিস্থিতি হঠাৎই পাল্টে যায়। সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কড়া ভাষায় অভ্যুত্থানকারীদের দেখে নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এবং বলেন, তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায়, অভ্যুত্থানকারীরা ব্যর্থ হয়েছেন। উচ্চপদস্থ সেনানায়করা সরকারের পক্ষেই আছেন। আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ তখনো অভ্যুত্থানকারীদের হাতে। কিন্তু ইস্তানবুল তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ তখন ইস্তানবুল আর আঙ্কারার রাস্তায় নেমে আসেন। বিমানবন্দরে যে বিদ্রোহী সেনারা অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের ঘেরাও করে জনতা। পুরো বিমানবন্দর দখল করে নেয় তারা। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিআরটি থেকে অভ্যুত্থানকারীরা বেশ কিছু ঘোষণা প্রচার করেছিলেন। তারা কারফিউ জারি করেন।

‘লড়াই চলবে’ : বিদ্রোহী সেনাসদস্যদের আত্মসমর্পণ এবং স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণ সরকার নিলেও অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। তুরস্কের সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিস থেকে আসা ওই ই-মেইলে বলা হয়, তাদের লড়াই এখনো চলছে। নিজেদের ‘পিস অব হোম মুভমেন্ট’ পরিচয় দিয়ে ই-মেইলে লড়াইয়ের এই সময়ে জনসাধারণকে ঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। রাজপথে থাকা বিদ্রোহী সেনাসদস্যরা আত্মসমর্পণ করলেও একটি অংশ তাদের কবজায় থাকা বিমান থেকে গোলা ছুড়ছিল বলে রয়টার্স জানায়। তবে তাদের নিরস্ত্র করতে অভিযানে থাকে যুদ্ধবিমানগুলো। ২০১০ সালে ডানপন্থি এরদোগান সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের সময় অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন একদল সেনা চেষ্টা চালিয়েছিল অভ্যুত্থানের। ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ৩০০ সেনা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।

গ্রেফতার ১৫৬৩ সেনা : অভ্যুত্থানে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে বলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিমকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় টেলিভিশনের খবরে শুক্রবার মধ্যরাতে বলা হয়, অভ্যুত্থানে জড়িত ১৩০ জন সেনাসদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টেলিভিশনের ছবিতে ইস্তানবুল ও আঙ্কারায় রাজপথে থাকা সেনাসদস্যদের পুলিশের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে দেখা যায়। এ সময় ট্যাঙ্কগুলোতে উঠে সরকার সমর্থকরা উল্লাসে মেতে ওঠেন। গতকাল সকাল নাগাদ সারা দেশে সেনাসদস্য গ্রেফতারের সংখ্যা এক হাজার ৫৬৩ জনে পৌঁছায়। এর মধ্যে পাঁচজন জেনারেল ও ২৯ জন কর্নেল রয়েছেন।

নিহত দুই শতাধিক : তুরস্কে সামরিক বাহিনীর ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় ২৬৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে অংশ নেওয়া ১০৪ সেনাসদস্য, ৪৭ জন বেসামরিক লোক ও ৪১ জন পুলিশ সদস্য। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানায়।

তুরস্কে বাংলাদেশীদের চলাচলে সতর্কতা : সেনা ব্যর্থ অভ্যুত্থান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের চলাচলে সতর্ক থাকার পরামর্শ  দেওয়া হয়েছে। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ পরামর্শ  দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,  সেখানকার বাংলাদেশীরা নিরাপদ আছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তুরস্কে ১৫ জুলাই  থেকে  যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার  প্রেক্ষিতে  সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জন সমাগম রয়েছে, এমন স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া  যে  কোনো প্রয়োজনে অঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস অথবা ইস্তাম্বুলের কনস্যুলেট  জেনারেলের কার্যালয়ে  যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।  যোগাযোগের জন্যে তিনটি  ফোন নম্বরও  দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো হলো— +৯০৫৩০৭৬৩৫৯১১,  +৯০৫৩১৬৮০১১৯০,  +৯০৫০৬৩৬৪৩১৭৩।

দুনদার ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান : তুরস্কের ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল উমিত দুনদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা চলার সময় থেকে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল হুলুসি আকার নিখোঁজ থাকায় দুনদারকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে দুনদার দেশটির ‘ফার্স্ট আর্মি কমান্ডার’ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

উদ্ধার সেনাপ্রধান হুলুসি : অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময় নিখোঁজ তুরস্কের সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারকে উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। শুক্রবার রাতে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা শুরুর পরপরই বিদ্রোহী সেনাদের একটি গ্রুপ তাকে জিম্মি করে আঙ্কারা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একিনসিলার বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায়। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করেন তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া : এদিকে যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা নস্যাতের ঘটনায় এরদোগান সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে। ন্যাটোও তুরস্ক সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। রয়টার্স জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি অভ্যুত্থানচেষ্টার খবর পেয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে টেলিফোন করে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের প্রতি ওয়াশিংটনের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন।

এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তুরস্কে গণতান্ত্রিক সরকারের পাশে থাকতে সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে হোয়াইট হাউস জানায়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ রক্তপাত এড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, তুরস্কের যে কোনো সমস্যার সমাধান দেশটির সংবিধান অনুসারেই হওয়া উচিত, অন্য কোনোভাবে নয়। ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে তুরস্ককে ‘আঞ্চলিক শক্তি’ উল্লেখ করে বলা হয়, এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় তুরস্কে শান্তি থাকা প্রয়োজন। মস্কো আশা করে, তুরস্কে যে সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, এর সমাধান শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। তুরস্কের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। দেশটির সরকার তুরস্কে থাকা যুক্তরাজ্যের সব নাগরিককে নিরাপদ অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল আশা করছেন, তুরস্কের সব পক্ষ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। তুরস্কের অন্যতম মিত্রদেশ কাতার এরদোগানকে উত্খাতে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। ইরান বলেছে, তুরস্কের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তুরস্কের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ।

সর্বশেষ খবর