রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইসলাম হত্যা-সন্ত্রাস সমর্থন করে না

বললেন সাবেক হিযবুত তাহরীর নেতা মহিউদ্দিন ফিরতে চান শিক্ষকতায়

সাখাওয়াত কাওসার

ইসলাম হত্যা-সন্ত্রাস সমর্থন করে না

‘কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড-হত্যা ইসলাম সমর্থন করে না। মানুষের জীবন, সম্পদ এবং সম্মানের সামান্যতম ক্ষতি করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। সমগ্র মুসলিম জাতির জন্যও এটা মারাত্মক ক্ষতির কারণ। কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমি কখনো সমর্থন করিনি, করবও না।’ কথাগুলো বলছিলেন হিযবুত তাহ্রীরের একসময়ের শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মহিউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সাত বছর ধরে এই সংগঠনটির সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। যেদিন থেকে গৃহবন্দী, পরে আনুষ্ঠানিক আটক হলাম তার পর থেকে আমি সবকিছু থেকে দূরে। এখন আমি আবার আমার পেশা শিক্ষকতায় ফিরে যেতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, কাবা শরিফের চেয়েও মানুষের রক্ত পবিত্র। তবে বর্তমানে যেভাবে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, তা ইসলামে গর্হিত অপরাধ। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, “এসব ঘটনাকে আমি তীব্রভাবে ঘৃণা করি। এগুলো দেশের জন্য ভয়াবহ ইন্ডিকেশন। ‘ইসলাম ও মানুষ হত্যা’ এবং ‘ইসলাম আর রক্ত’ ভয়াবহভাবে মিশিয়ে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা তৈরির চেষ্টা চলছে।” হিযবুত তাহ্রীরের সাবেক এই শীর্ষ নেতা দাবি করেন, নিষিদ্ধ এই সংগঠনটির সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী কিংবা মুখপাত্র কিছুই নন। এমনকি এই সংগঠনের সাধারণ সদস্যও নন। সংগঠনটির বর্তমান কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে মহিউদ্দীন বলেন, ‘হিযবুত তাহ্রীর বর্তমানে কী ধরনের কর্মকাণ্ড করছে সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তাদের কারও সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই সময়টাতেও যে হিযবুত তাহ্রীরের কিছু বাড়াবাড়ি কিংবা ভুল হয়নি তা আমি বলব না। ২০০৯ সালে যেদিন সংগঠনটি নিষিদ্ধ হয় সেদিন থেকেই তো আমি গৃহবন্দী। কোনো সংগঠনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে আমি সমর্থন করি না।’ এখন আপনাকে যদি হিযবুত তাহ্রীরের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয় আপনি তা অব্যাহত রাখবেন কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তা কখনো নয়। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতেও আমি কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত হব না। এ বিষয়টি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছি।’ অন্যদিকে, গত ১৪ জুলাই মহিউদ্দীন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ায় এসেছে। তাই দেশবাসীর কাছে আমার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য আমি নিম্নলিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করছি : ২০০৯ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনে গৃহবন্দী রাখা হয়।

২০১০ সালের ২১ এপ্রিল আমাকে আটক করে ওই বছরেরই ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিভিন্ন মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। অথচ যেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময়ে মামলাগুলো হয়, সে সময় পুরোটাই আমি গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলাম। সব মামলায় মহামান্য আদালতের স্থায়ী জামিন লাভ করে আমি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি লাভ করি এবং পরবর্তীতে যোগদানপত্র নিই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমার সার্বিক অবস্থান তুলে ধরি এবং এও জানাই যে, আমার সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের কোনোরূপ সম্পৃক্ততা নেই। আমি ওই সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী অথবা মুখপাত্র কোনো কিছুই নই। আমি সংগঠনটির এমনকি সাধারণ সদস্যও নই। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষও এ বিষয়টি অবগত আছেন।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয় : ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি এও জানাই যে, আমি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হব না। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একটি আইনি নোটিস পাঠাই।’

সর্বশেষ খবর