রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নর্থ সাউথের প্রো-ভিসির বাড়িতেই গুলশান হামলার ছক, আটক ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন আহসানের (জি ইউ আহসান) বাড়িতে বসেই আঁকা হয়েছিল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ছক। জঙ্গিরা হামলার আগে ওখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। এ অভিযোগে গতকাল বিকালে রাজধানীর ভাটারা এলাকার একটি বাড়ি থেকে জি ইউ আহসান, তার ভাগ্নে আলম চৌধুরী এবং ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মাহবুবুর রহমান তুহিনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এ সময় ওই বাড়ি থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে কী কী আলামত, তা খোলাসা করেননি তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কাউন্টার টেরোরিজম সূত্র বলছে, ড. আহসান তার লালমাটিয়ার বাড়িতে বাস করলেও তার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ মে তার বাড়িটি জঙ্গিদের কাছে ভাড়া দেন ভাগ্নে আলম চৌধুরী। বাসা ভাড়া বাবদ জঙ্গিদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে ৪০ হাজার টাকাও নেওয়া হয়। প্রতি মাসের ভাড়া ছিল ২২ হাজার টাকা। সেখানে ১০ জন জঙ্গি থাকত। এর মধ্যে পাঁচজন কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়।

জি ইউ আহসানের ভাটারা এলাকার বাড়িতে বসেই জঙ্গিরা হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পরিকল্পনা করে। সেখানেই তারা প্রশিক্ষণ নেয়। প্রস্তুতি নিয়ে হামলা চালাতে জঙ্গিরা ওই বাড়ি থেকে হলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়েছিল। তারা বেকারিতে অবস্থান করার সময় তিনটি দেশে তাদের ‘নিজ লোকের সঙ্গে’ যোগাযোগ করেছিল। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, জি ইউ আহসান তার বাড়ির ভাড়াটেদের কোনো তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় সরবরাহ করেননি। জঙ্গি হামলার মদদদাতা হিসেবে তাকেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

গুলশান হামলার ঘটনা তদন্তে অগ্রগতি আছে : গুলশানে হামলার ঘটনা তদন্তে অগ্রগতি আছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। একই সঙ্গে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যারা জঙ্গি কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলায় মদদদাতা, অর্থদাতা ও আশ্রয়দাতাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে তদন্তের খাতিরে এখনই বিস্তারিত কিছু না বললেও পুলিশ তথ্যভিত্তিক কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা বলেন। নিরাপত্তাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে দাবি করে ডিএমপি কশিনার বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশি-বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে কমিশনার বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছেন, বনানী থানার ওসি কেন গুলশান এলাকায় গেছেন? এ ঘটনার পরপরই আমি আমার সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম ঘটনাস্থলে যেতে। বনানী থানার ওসিও সে কারণেই গিয়েছিলেন। দেশের জন্য তিনি প্রাণ দিয়েছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এ বক্তব্যকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। তার এ বক্তব্য উদ্দেশ্যপূর্ণ ও সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়ার শামিল।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিষয়ে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যারা উসকানি দিচ্ছেন, তাদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। কেউই প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গুলশান হামলার ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে নিয়মিত তল্লাশি করা হচ্ছে। পুলিশের এ ধরনের কাজে সহায়তার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। কোথাও কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখলে তিনি তা পুলিশকে জানাতে বলেন। এ ক্ষেত্রে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও নিশ্চয়তা দেন কমিশনার। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় পুলিশই যথেষ্ট নয়। এর জন্য জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

নগর পুলিশের প্রধান বলেন, জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতাদের খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাদের যার যার মতো করে নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ করেছি। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

জঙ্গিরা তথ্য গোপন করে বাসাভাড়া নিয়েছে। তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে সব তথ্য রয়েছে। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। প্রত্যেকের দোষ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ১০, ২০ জন জঙ্গি ধরে কোনো লাভ হবে না। এর মূল দেখতে হবে। মূল উৎপাটন করতে হবে।

কতজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? এর উত্তরে কমিশনার বলেন, অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সংখ্যা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। তদন্ত চলছে।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কিনা— সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারব না। গণমাধ্যমে এসেছে এবং আমরাও জেনেছি, বেশ কিছু তরুণ স্বেচ্ছায় নিখোঁজ রয়েছে। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে নিখোঁজ থাকলেই যে সে জঙ্গি, এমনটি ভাবা যাবে না। তাই নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

গুলশানের ঘটনায় আটক থেকে উদ্ধার হাসনাত করিম ও তাহমিদ পুলিশের কাছে আছেন কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এটা আমাদের তদন্তকারী দল বলতে পারবে। তাদের জিজ্ঞাসা করুন। এ ঘটনার পর ভারতে কিছু ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে।

তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুলশানে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সবাই এ দেশের। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো চক্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না।

তদন্তে বাইরের দেশের কারিগরি সহায়তা নেওয়া হবে কিনা— জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা এ ধরনের ঘটনা তদন্তে সম্পূর্ণ সক্ষম। তবে কারিগরি কোনো সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে নেওয়া হতে পারে।

সর্বশেষ খবর