মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐক্য-অনৈক্যের আলোচনায় ব্যস্ত বিএনপি

নেই দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম

মাহমুদ আজহার

ঐক্য-অনৈক্যের আলোচনায় ব্যস্ত বিএনপি

জঙ্গিবাদ দমনে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেলেও জাতীয় ঐক্য আর অনৈক্য নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বিএনপি। দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। সাংগঠনিক কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। তা সত্ত্বেও নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনে শুধু জাতীয় ঐক্যের বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে, যদিও এতে সরকারের কোনো সাড়া নেই। এ ইস্যুতে দল ও জোটের নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জঙ্গিবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের ডাকও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য হয়েই গেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই বিএনপি বিকল্প কিছু ভাবছে। সরকারের সঙ্গে না হলেও বিএনপি ২০-দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তম প্লাটফরম গড়ার চিন্তাভাবনা করছে। এটাই সুযোগ। এ নিয়ে জাতীয় কনভেনশনেরও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একইভাবে দেশব্যাপী দলীয় সভা-সমাবেশের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের স্বার্থেই বিএনপি জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়তে চায়। কিন্তু সরকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমন করতে না পেরে বিএনপিকে অভিযুক্ত করছে। কিছু হলেই সরকার বলে, বিএনপি-জামায়াত করেছে। এ ধরনের বক্তব্যের কারণে প্রকৃত অপরাধীরা সুবিধা পায়। এসব করতে গিয়ে ঘটনা আরও জটিল হয়েছে। বিএনপির জাতীয় ঐক্যের ডাকে সরকার সাড়া না দিলে আরও বেশি মূল্য দিতে হতে পারে। এ ঐক্যের আহ্বানকে গ্রাহ্য না করা বিপজ্জনক হতে পারে।’

বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ কখনই সংলাপ-সমঝোতায় বিশ্বাসী নয়। তাই দেশের চলমান সংকটে সংলাপ-সমঝোতায় যে সরকার বসবে না তা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকে পরিষ্কার। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। কোন কোন দলের সঙ্গে হলো দেশের মানুষ তা জানে না। এটা সমাধান নয়। জঙ্গিবাদ ইস্যু নিয়ে আলোচনার মানে এই নয়, ক্ষমতার ভাগাভাগি। কিন্তু সরকার ভয় পাচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা মানেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি একটি প্লাটফরম গঠনের চেষ্টা করছে। বিগত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগেও একাধিকবার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। সিনিয়র একাধিক নেতাকে প্লাটফরম গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, বিকল্পধারা, জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্যসহ সরকারবিরোধী কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। জামায়াত ছাড়তে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে বিএনপিকে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। প্রগতিশীল অন্য দলগুলোর পক্ষ থেকেও একই শর্ত ছিল। তবে জোটের পাশাপাশি আলাদাভাবেও সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো নিয়ে নতুন ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিএনপিতে। এ নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি আশা করছে, সরকার জাতীয় স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে চলমান ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবে। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ডে তা মনে হচ্ছে না। বিএনপির আহ্বানে শেষ পর্যন্ত সাড়া না দিলে ২০-দলীয় জোটের বাইরে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম তৈরির চেষ্টা করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যারা একমত হবে, তাদের নিয়ে এ ঐক্য গঠন করা হবে।

জানা যায়, সরকারবিরোধী ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রেও বাধা জামায়াত। এ ব্যাপারে সম্পতি জোটসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে প্রকাশ্য মতামত এসেছে। খালেদা জিয়া বৈঠকে বলেন, বিএনপি জাতীয় ঐক্য করতে চায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও জামায়াতই বাধা। জামায়াতের কারণে ড. কামালের গণফোরাম, রবের জাসদসহ আরও কিছু দল ও ব্যক্তি ঐক্যের আহ্বানে সাড়া দিতে রাজি হন না। জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া এক জামায়াত নেতা বলেন, ভোটের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান কী? জবাবে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এটি ভোটের বিষয় নয়। এখানে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের অবস্থান ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির এক নেতা বলেন, জামায়াত নিয়ে বেগম জিয়ার মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। জামায়াতের বাইরেও আলাদা প্লাটফরম করতে চান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বিএনপি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে। সরকার যদি শর্তারোপ করে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে চায়, তা পারে। জাতীয় ঐক্য না হলে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে বিএনপির পক্ষে যা করা সম্ভব, সবই করা হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কথা বলছেন, তার ওপরই কর্মসূচি ঘোষণার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর