বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি নিবরাসের খবর আগেই জানত পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানে নিহত হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস আগে থেকেই জঙ্গি নিবরাস ইসলামের খবর জানত পুলিশ। একই সময়ে বিষয়টি আদালতকেও অবহিত করা হয়। এ বিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলাও করে পুলিশ। মামলা নম্বর-১২(২)১৬। মামলার বাদী গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার। ওই মামলার মোট ১২ জন আসামির মধ্যে নিবরাসও একজন। ওই মামলার গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে নিবরাসসহ অন্যদের বিষয়ে খোঁজ পায় পুলিশ। জানতে পারে তাদের পরিকল্পনার কথাও। সেই পরিকল্পনার মধ্যে ছিল ঢাকার শিশু পার্কসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনার কথাও। তবে এটুকুতেই সার। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর জানার চেষ্টা করেনি পুলিশ। আর সেই কারণেই গুলশান ট্র্যাজেডির মতো একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পেরেছে, যাতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে একজন সেই নিবরাস ইসলামই। যিনি ওই ঘটনায় ২ জুলাই সকালে পরিচালিত সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন। মামলার নথিতে বলা হয়, ঢাকার শাহবাগ থানা ও রমনা থানা এলাকার ইসলামী জঙ্গি গ্রুপের ১০-১২ জন সদস্য শাহবাগ থানাধীন শিশুপার্কের আশপাশে অবস্থান করে নিকটবর্তী কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলার জন্য একত্রিত হতে পারে বলে ওই মামলায় বলা হয়। ওই তথ্যের বিষয়বস্তু নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করি। উক্তরূপ অভিযানের জন্য আরও অফিসার ফোর্সের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জানালে ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আরও ফোর্স নিয়ে শাহবাগ থানাধীন শিল্পকলা একাডেমির সামনে অভিযানে যাই। এ সময় আমরা জানতে পারি যে, ওই জঙ্গি গ্রুপের সদস্যরা শাহবাগ থানাধীন ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট ভবনের মূল গেটের পাশে অবস্থান করছে। পরে সেখানে ফুটওভার ব্রিজের নিচে গেলে আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ছয়-সাতজন যুবক দৌড়ে পালানোর সময় তিনজনকে আটক করা হয়। বাকি তিন-চারজন পালিয়ে যায়। এ সময় উপস্থিত লোকেদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত যুবকরা তাদের পরিচয় জানায়। তাদের নাম-ঠিকানা হলো—১. রাইয়ান মিনহাজ ওরফে রাইয়ু ওরফে আরমিন পিতা মিনহাজ উদ্দিন আহমদ। সাং ৩১/১ মধ্য বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা। বর্তমান ঠিকানা—সেঞ্চুরি টাওয়ার, সেঞ্চুরি মার্কেটের পিছনে, ওয়ারলেস গেট, মগবাজার, ঢাকা। ২. আহমেদ শাম্মুর রাইহান ওরফে চিলার, পিতা মৃত মফিজউদ্দিন আহমেদ, সাং শাহবাজপুর, থানা-সরাইল, জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বর্তমান ঠিকানা-১০৪/১/ক, বড় মগবাজার, অগ্রণী অ্যাপার্টমেন্ট, এ-১, রমনা, ঢাকা। ৩. তৌহিদ বিন আহমেদ ওরফে রিয়াজ ওরফে কাচ্চি। পিতা শহীদুল্লাহ আহমেদ। সাং- রামকৃষ্ণপুর, থানা বাঘারপাড়া, জেলা যশোর। বর্তমান ঠিকানা— বাড়ি-৯৯, রোড-১৩, ব্লক-ডি, বনানী, ঢাকা। উক্ত স্থানের আশপাশে আরও আট-নয়জন সদস্য ছিল। তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। তাদের সঙ্গী ও পলাতকদের নাম নিবরাস ইসলাম ওরফে শিমু (২৪), সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো (২৪), তৌসিফ (২৪), শাবাব সালাউদ্দিন ওরফে হক ওরফে হনু, সালভী আলী ওরফে মালাবী (২৫), রিফাত (২৫), তুরাজ (২৮), ইয়াসীন তালুকদার ২৬), গালিব (২৭) বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার নথিতে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃত আসামিদের তাত্ক্ষণিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঢাকা শহরে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করার জন্য জমায়েত হয়েছিল বলে জানায়। এ ছাড়া সাক্ষীদের সামনে আসামিদের দেহ তল্লাশি করলে আসামিদের কাছ থেকে জঙ্গি কার্যক্রমে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক, জিহাদি বইসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করে জব্দ তালিকা করা হয়। আসামিদের ই-মেইল আইডি, ফেসবুক ও টুইটার আইডিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করলে তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাপক তথ্য পাওয়া যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। 

সর্বশেষ খবর