বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ওরা ফিরে আসতে শুরু করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা কেউ কেউ পরিবারের কাছে ফিরে আসতে শুরু করেছে। র‌্যাবের ২৬২ জনের নিখোঁজ তালিকা প্রকাশের পর নিখোঁজ ছয়জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তালিকায় নাম রয়েছে তিনজনের। তালিকাভুক্ত এই তিনজনের মধ্যে একজন রয়েছেন রাজশাহী কারাগারে। সন্ধান পাওয়া এই ছয়জনের একজন তরুণী।

জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িত জঙ্গিরা দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিল বলে তাদের পরিবার থেকে দাবি করা হয়। এরপর সারা দেশে আরও অনেক তরুণ নিখোঁজ বলে খবর বেরিয়ে আসে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে নিখোঁজ থাকা ২৬২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে র‌্যাব। র‌্যাব জানিয়েছে, নিখোঁজ এই ব্যক্তিদের অনেকেই জঙ্গি তত্পরতায় জড়িয়ে পড়েছে। র‌্যাবের এই নিখোঁজ তালিকা প্রকাশের পর ছয়জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরা নিখোঁজ হয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। নিখোঁজ তালিকায় ২১৫ নম্বরে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমতউল্লাহর নাম। ১৪ মে রাতে রাজশাহী নগরীর মতিহার থানায় রহমতুল্লার নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল আলম। জিডিতে তিনি বলেন, ১৩ মে সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ এক স্বজনকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে হল থেকে বের হয়ে যান রহমতুল্লাহ। রাতে তিনি আর ফেরেননি। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ১০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহকে নিয়ে জিডি করার তিন দিন পর ১৭ মে শিক্ষক রেজাউল হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানাতে গিয়ে তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন এই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানান। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ১৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রহমতুল্লাহকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। বর্তমানে সে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। তালিকার ১ নম্বর ক্রমিকে থাকা বগুড়ার ধুনট উপজেলার সাইদুল ইসলাম ঢাকায় তার কর্মস্থলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। উপজেলার মাধবডাঙ্গার মৃত হায়দার আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাকে ধরে নিয়ে গেলে ১৪ জুন তার স্ত্রী হোসনে আরা বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। দুই দিন পরেই সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দেয়। তালিকায় নাম প্রকাশের পর সাইদুল বনানী থানায় গিয়ে গতকাল সাধারণ ডায়েরি প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেন, তিনি কর্মস্থল পল্টনের ব্যাংক এশিয়ায় পিয়ন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা নিখোঁজের তালিকা তৈরি করেছি বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। যদি কেউ ফেরত আসে কিংবা কারও সন্ধান পাওয়া যায়, তা জেনে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে তালিকা হালনাগাদ করব। তালিকায় ৪৩ নম্বরে রয়েছে ছানাউল্লাহর নাম। তার বাবার নাম মাওলানা তাজুল। ঢাকার রমনার ১৭ মধুবাগ তাদের বাসা। মগবাজারে একটি মুদির দোকান চালান। তালিকায় ছানাউল্লাহর ফোন নম্বরও দেওয়া আছে। সেই নম্বরে যোগাযোগ করলেই তার প্রকাশ্যে থাকার তথ্য জানা যায়। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার খবরে আসতে থাকায় ১০ জুলাই শ্রীনগর থানায় জিডি করেন শ্রীনগরের একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীর মা। তিনি বলেন, ১৯ জুনের পর থেকে তার মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। জিডির ভিত্তিতে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল খবরও প্রচার করে, মেয়েটি জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে বলে পরিবার সন্দেহ করছে। খবর দেখেই মেয়েটি মঙ্গলবার বিকালে নিজেই শ্রীনগর থানায় হাজির হন। ওসি সাহিদুর রহমান বলেন, ওই তরুণী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার খবর ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন এবং তার এক সাবেক শিক্ষককে বিয়ে করার কথা জানান। কুমিল্লার হোমনা থানার ভাষানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মহসিন তার ছেলেকে ঢাকায় এনেছিলেন ভর্তির জন্যে। উত্তরা রাজউক কলেজে ভর্তির কথা বলে ছেলেই তাকে ঢাকায় আসতে বলেছিলেন। কিন্তু ভর্তির সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ তার কাছে পিন নম্বর চায়। মেহেদী তখন টয়লেটের কথা বলে লাপাত্তা। মঙ্গলবার উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে থেকে মেহেদীকে উদ্ধার করে উত্তরা থানার পুলিশ।

নিখোঁজের তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ : নিখোঁজ ব্যক্তিদের কেউ কেউ ফিরতে শুরু করার কারণে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিখোঁজ তরুণ বা যুবকদের তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল এ সংক্রান্ত চিঠি পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরবর্তী সময়ে এসব তরুণ/যুবক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ধর্মীয় উগ্রপন্থি জঙ্গি বিভিন্ন সংগঠনের নামে সারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, শিক্ষক, ব্লগার, বিদে?শি নাগরিক, এমনকি ইসলাম ধর্মের ভিন্ন মতবাদ অবলম্বনকারীদের হত্যা করছে। তাদের এ কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই এসব নিখোঁজ তরুণ/যুবকদের হালনাগাদ তথ্যাদি নাম-ঠিকানাসহ জরুরি ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হচ্ছে।

বাবা মহসিনের কাছে পুলিশ তাকে বুঝিয়ে দেয়। তবে মঙ্গলবার রাতে র?্যাব থেকে প্রকাশিত নিখোঁজের তালিকার ১৮ নম্বরে ছবিসহ স্থান পায় মেহেদী। মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থেকে ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়া দুই তরুণকে সন্দেহবশত আটক করা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের খোঁজ চেয়ে পরিবার থানায় জিডি করে। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামের কাদের শিকদারের ছেলে আবদুল ওয়াহিদ (১৮) ও তার বন্ধু ভোলার লালমোহন উপজেলার পারাগঞ্জ গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে মো. আনাস (২২) মঙ্গলবার রাতে ফিরেছেন বলে টঙ্গীবাড়ি থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুর কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ থেকে রওনা হয় ওই দুই তরুণ। ঢাকার বাবুবাজার মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার পর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের সন্দেহবশত আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিলে গতরাতে তারা বাড়ি ফিরে আসে। এদিকে ওই সময় থেকেই তারা নিখোঁজ জানিয়ে মঙ্গলবার টঙ্গীবাড়ি থানায় জিডি করেন ওয়াহিদের বাবা কাদের শিকদার। তিনি বলেন, ছেলে বাবুবাজারের মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার পর একবার মোবাইলে তার সঙ্গে কথা হলেও বিকাল থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর রাতে আবার দুই তরুণের ফোন খোলা হলেও তা কেউ ধরেনি বলে জিডিতে জানান কাদের শিকদার। টঙ্গীবাড়ির ওসি আলমগীর হোসেন জানান, জিডি হওয়ার পর তারা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার রাতে দুই তরুণ ফিরে আসেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর