বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

তারেক রহমানের রায় আজ বিএনপিতে উৎকণ্ঠা

অর্থ পাচার মামলার আপিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের খালাস ও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেবে। গতকাল সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হাইকোর্টের কার্যতালিকা থেকে বিষয়টি জানা গেছে। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা গেছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, খালাসের রায়কে সাজায় পরিণত করতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্দেশ্য, তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে আগামীতে নির্বাচন ও বিএনপির রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। কিন্তু সরকারের এ উদ্দেশ্য কখনই সফল হবে না। আদালত সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের কার্যতালিকায় তারেক ও মামুনের মামলাটি ৪ নম্বরে রয়েছে। দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালত থেকে তারেক খালাস পেলেও একই আদালত মামুনকে অর্থদণ্ডসহ সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানি লন্ডারিং মামলা করতে যেসব উপাদান থাকা দরকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সে ধরনের কোনো উপাদান না থাকা সত্ত্বেও এ মামলা করা হয়েছে। আমরা মনে করি তারেক রহমানকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যই রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।’ জানা যায়, গত ১৬ জুন তারেকের খালাস ও মামুনের সাজার বিরুদ্ধে দুদকের আপিলের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এ মামলায় দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, মামুনের পক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ফখরুল ইসলাম শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির। তারেক পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। ঘুষ হিসেবে গ্রহণের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই মামলা করা হয়।

বিচার শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস দেন। একই সঙ্গে তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে অর্থ পাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি মামুনকে ৪০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি এ আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারেক রহমানকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। এরপর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি কার্যতালিকায় এলে গত ১২ জানুয়ারি আবারও বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণ ও আপিলের বিষয়ে অবহিত করতে গত ২০ ও ২১ জানুয়ারি দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় হাইকোর্ট বিভাগ। চার্জশিটে থাকা দুই ঠিকানায় (লন্ডন ও ঢাকা) সমনের নোটিসও পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে আদালত। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নির্মাণকাজ পাইয়ে দিতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুদক এ মামলা করে। মামলাটি দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়ার সময়ই তারেক অনুপস্থিত ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে মামুন জরুরি অবস্থায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কারাগারে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানো হয়। এ থেকে তারেক রহমান ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়।

সর্বশেষ খবর