তারেক রহমান রাজনৈতিক ঢাল ব্যবহার করে সচেতনভাবেই আর্থিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েন মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছে, তার মতো রাজনৈতিক শক্তি বা ঢাল ব্যবহার করে দেশে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের প্রবণতা বাড়ছে। এ ছাড়া তারেক রহমান তার রাজনৈতিক উচ্চ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে কনসালটেশন ফি’র নামে তার সহযোগীর (মামুন) মাধ্যমে নোংরা অর্থ অর্জন করেছেন বলে রায়ে বলা হয়েছে। অর্থ পাচারের মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া খালাসের বিরুদ্ধে দুদকের আপিলের রায়ে হাইকোর্ট এ পর্যবেক্ষণ দেয়। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশে তারেক ও তার ব্যবসায়িক বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন অর্থ পাচার মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ডসহ ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। মামুনকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে তার জরিমানা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়ে মামুনকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৪০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার এবং সেখান থেকে খরচ করার অপরাধে তারেক ও মামুনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেই অ্যাকাউন্টে অর্থ জমাকারী আরও চারজনের বিরুদ্ধে দুদককে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ চারজন হলেন—হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশনের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলাম এবং মায়ার সাইরি ও মেরিনা জামান। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে কাজে লাগিয়ে সংঘটিত এ ধরনের দুর্নীতি সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি। দেশের কল্যাণ ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ ধরনের রাজনৈতিক সহানুভূতি ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে হওয়া দুর্নীতি রুখে দেওয়ার সময় এখনই। আদালত পর্যবেক্ষণ দেয়, এটা পরিতাপের বিষয় যে, তারেক রহমান এমন রাজনৈতিক স্তরের ব্যক্তি, দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার ভূমিকা রাখার কথা, কিন্তু তিনিই সচেতনভাবে আর্থিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। তার মতো রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে দেশে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের প্রবণতা বাড়ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বড় ধরনের সুসংগঠিত আর্থিক অপরাধ যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে সে বিষয়ে সমাজকে সচেতন হতে হবে, নিন্দা জানাতে হবে। এ দেশের প্রতিটি নাগরিক অর্থ পাচারের মতো আর্থিক অপরাধের ভিকটিম। আদালত বলে, তারেক রহমান অবৈধ উৎস থেকে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি সচেতনভাবে এ অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়টি নমনীয় দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে না। আদালত মন্তব্য করে, যে শক্তি অর্থের উৎস ও অর্জনের উপায় গোপন করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচারে জড়িত থাকে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে তাদের রুখতে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা দরকার।