রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মানহীন কাগজ কিনে সরকারি টাকা লুটপাটের মহা আয়োজন

এনসিটিবির বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ১

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী বছর শুরুতেই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে যে কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হবে, তা মানহীন কাগজে ছাপিয়ে সরকারি টাকা লুটপাটের মহাআয়োজনে শামিল হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। আগামী বছরের শুরুতেই মাধ্যমিক স্তরের কোটি শিক্ষার্থীর হাতে যে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হবে, তা মানহীন কাগজে ছাপিয়ে সরকারি টাকা লুটপাটের মহাআয়োজনে শামিল হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। এমন তথ্য উল্লেখ করে এনসিটিবি সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এই মহাআয়োজনে

 প্রশাসনের এক দল প্রভাবশালী অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত। দুর্নীতি-অনিয়মের এই গুরুতর অভিযোগের আলোচনা এখন এনসিটিবি কর্মকর্তাদের মুখে মুখে।  জানা গেছে, মানহীন কাগজে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নিম্নমানের পাঠ্যবই দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কাগজ কেনার ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনা মূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য উৎপাদনে নেই—এমন প্রতিষ্ঠানকেও কাগজ কেনার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। বিষয়টি বর্তমানে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মানহীন প্রতিষ্ঠানকে কাগজ কেনার জন্য নির্বাচিত করায় সর্বত্রই সমালোচনার ঝড় বইছে। কাগজ উৎপাদনকারী শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাগজ কেনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন নেই—এমন প্রতিষ্ঠানও আছে কাগজ কেনার তালিকায়।  জানা যায়, এনসিটিবির টেকনিক্যাল কমিটি কাগজ কেনার টেন্ডার মূল্যায়ন করে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে। কমিটি এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিলেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন এবং কাগজ উৎপাদনে সক্ষম নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ ক্রয়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। মানহীন কাগজ দিয়েই ছাপা হবে দেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই। আগামী বছরের মাধ্যমিকের বই মানহীন কাগজে ছাপা হলে প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকের বই নিয়েই সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের মানহীন কাগজে পাঠ্যবই মুদ্রিত হলে দেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর হাতে চলে যাবে নিম্নমানের বই। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহলের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সব মহলেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারকে পড়তে হবে বেকায়দায়। অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাগজ কেনার দাবি সংশ্লিষ্টদের। প্রাথমিকের বই আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ছাপানো হলেও মাধ্যমিকের বই ছাপা হয় দেশীয় দরপত্রের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাগজ কেনাকাটার বিষয়টি এখন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কাগজ ছাপানোর ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হবে—নীতিমালায় এমন কোনো শর্ত নেই। কিছু প্রতিষ্ঠান কাগজ উৎপাদনই করছে না, তাদের কাছ থেকে কাগজ কেনা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানই কাগজ উৎপাদন করছে। জানা যায়, মাধ্যমিক স্তরের ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ২০ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কাগজ কিনতে এনসিটিবি গত মার্চে টেন্ডার আহ্বান করে। ২০টি লটে ভাগ করা ১৬১ কোটি টাকার এই টেন্ডারে অংশ নেয় ১৪টি প্রতিষ্ঠান। তা থেকে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক পাঁচটি লটের কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে গাজীপুর বোর্ড মিলস। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এমনকি এনসিটিবির পরিদর্শন টিম সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েও প্রতিষ্ঠানের গ্যাস সংযোগ বন্ধ পেয়েছে। এরপরও ওই প্রতিষ্ঠানকে কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। কাগজ উৎপাদনে সক্ষম নয় এমন প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাগজ সরবরাহ করবে, আদৌ মানসম্পন্ন কাগজ সময়মতো সরবরাহ করতে পারবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সূত্রমতে, চারটি লটের কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে মেসার্স আল নূর পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসকে। প্রতিষ্ঠানটির বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন নেই। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ গত ১৮ মে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পৃথক তিনটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কর্মকর্তারা দেখতে পান, লেখা ও ছাপার কাগজের গুণগত মান যাচাই ছাড়া এবং বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স গ্রহণ না করে অবৈধভাবে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন বা লোগো ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাসাধারণকে প্রতারিত করে পণ্য বিক্রয় ও বিতরণ করায় আল নূরের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। একই দিন একই অভিযোগে একই আদালতে মামলা হয়েছে এ রকম আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো পূর্বাচল পেপার মিলস লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানও একটি লটের কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর