সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেনা পদোন্নতিতে যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের প্রাধান্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

সেনা পদোন্নতিতে যোগ্য ও দেশপ্রেমিকদের প্রাধান্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর কনফারেন্স হলে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৬ এর ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন —পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে ‘সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদ-২০১৬’-তে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য সাতটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করছেন। পদোন্নতি প্রদানের সময় আপনাদের কতিপয় বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এ সাতটি বিষয় হলো— মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তত্পরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা-বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য, নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।’ শেখ হাসিনা বলেন, একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী দেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম ও দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। তিনি বলেন, নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে তাদের হাতে, যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী, এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও গৌরবময় অধ্যায়। আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক ও মুখ্য বিষয়। আপনাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে, যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।’ তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে, সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য ট্রেস (টার্বুলেটেড রেকর্ড অ্যান্ড কমপারেটিভ ইভল্যুশন)-এর মতো একটি আধুনিক পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়, যা কিনা পেশাগত দক্ষতার বিভিন্ন দিকের তুলনামূলক মূল্যায়ন প্রকাশ করে। একজন অফিসার কেবল একটি পদ বা নিযুক্তির জন্যই যোগ্য না হয়ে বরং বিভিন্ন ধরনের নিযুক্তি— যেমন কমান্ড, স্টাফ, প্রশিক্ষকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিযুক্তির জন্য উপযুক্ত হন।’ বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি প্রদান করতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার বিষয়টি অন্য কোনো গুণাবলির সঙ্গে তুলনীয় নয়। শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনো আপস অবশ্যই বর্জনীয়। কেবল একাডেমিক ও কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ হলে হবে না, মাঠে কর্মতত্পরতায় কৌশলী, ত্বরিত ও দক্ষ হতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.), সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক, মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জে. এম মাহফুজুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী বরাবরই সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুদায়িত্ব পালন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের শাসনামলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাসদস্যদের ভূমিকা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সে কাজ জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম পেয়েছে। দেশের যে কোনো সংকটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনাও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাসসহ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে’ সম্পন্ন হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন। এ সময় সেনাবাহিনীর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন। বান্দরবানের রুমায় পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাসের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া, কক্সবাজারের রামুতে সেনানিবাস স্থাপনের কাজ শুরু, নবগঠিত কম্পোজিট ব্রিগেডের আবাসনের লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাশে সেনানিবাস গড়ার প্রকল্পের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সব পর্যায়ে প্রশিক্ষণের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। ‘কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ’ এই মূলমন্ত্র সামনে রেখে এবং একটি সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে দুই বছরের পরিবর্তে তিন বছরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সৈনিকদের শিক্ষার মান বৃদ্ধিকল্পে উচ্চতর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নৌবাহিনীর চিকিৎসাসেবা আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা সিএমএইচ-কে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের আদলে বিভিন্ন সেনানিবাসে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু হয়েছে। কয়েকটি ডেন্টাল কলেজ এবং নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ ও ‘আর্মি স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীতে মহিলা অফিসারের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মহিলা সৈনিক ইতিমধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ সফলতার সঙ্গে শেষ করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসারদের মধ্যে অনেকেই স্টাফ কলেজ সম্পন্ন করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ, যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হয়।

সর্বশেষ খবর