সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রিজার্ভ চুরির তদন্তে আসতে চায় বিশ্বব্যাংক

মিশন পাঠানোর আগে চাইল নিরাপত্তা সুরক্ষা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার তদন্তে সহায়তা করতে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসতে চাইছে। প্রতিনিধি দল পাঠানোর আগে দাতা সংস্থাটি ঢাকার নিরাপত্তা সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিয়তাও চেয়েছে সরকারের কাছে। তবে তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আলোচনার বিষয় এখনো চূড়ান্ত করেনি সরকার।

১৮ জুলাই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) প্রতিনিধি দল ঢাকায় পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে চিঠি লেখেন বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি রাজশ্রী পারালকার। চিঠিতে বলা হয়, রিজার্ভ চুরির তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সমন্বয় সভা আগামী ২৮-২৯ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ইন্টারপোলের জাতীয় সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ওই সভায় অংশ নিতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক খাতবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ কেভিন স্টিফেনসন ও বিশেষজ্ঞ প্রিয়ানি মালিককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলটি ইআরডি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানশিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত চেয়েছে ইআরডি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজি হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে ইআরডি চিঠি পাঠিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকটি হবে কি না এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ চুরির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এই সমন্বয় সভাটি হওয়ার কথা ছিল এপিজের (এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন অ্যান্টি মানি লন্ডারিং) সভার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। তবে যেহেতু নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এপিজের সভাটি স্থগিত হয়েছে, তাই এ সভার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। জানা গেছে, রিজার্ভ চুরির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ইন্টারপোলের প্রথম সমন্বয় সভাটি এর আগে ফিলিপাইনে অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় সভাটি ঢাকায় অনুষ্ঠানের কথা ছিল। আর এই সমন্বয় সভায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে তদন্ত কার্যক্রমে যুক্ত হতে চেয়েছিল বিশ্বব্যাংক। ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ হ্যাকের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ উদ্ধারে কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দেন। পরে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করতে জাতিসংঘের কাছে চিঠি লেখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীর। অর্থ উদ্ধারে বিশ্বব্যাংকের সহায়তার ধরন সম্পর্কে সম্প্রতি সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছিলেন, প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ বা চুরি বা এ ধরনের যে কোনো ঘটনার পর ওই সম্পদ বা অর্থ উদ্ধারে জাতিসংঘের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটি যৌথ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়াটিকে স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ বা সংক্ষেপে ‘স্টার’ বলে অভিহিত করা হয়। ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম এবং বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে এ সম্পদ উদ্ধারে ভুক্তভোগী রাষ্ট্র বা সংস্থাকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাক হওয়া অর্থ যেহেতু ফিলিপাইনের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানান্তর হয়েছে, তাই অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশকে ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী তদন্ত বা এ-সংক্রান্ত আইনি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেহেতু জাতিসংঘের সদস্য, তাই এসব ব্যাপারে সহায়তা করবে ‘স্টার’। আর ‘স্টার’ যেহেতু জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগ, সে কারণে এ ঘটনায় বিশ্বব্যাংকের কারিগরি সহায়তার সুযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর