শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জামায়াত ছাড়াই ঐক্য আলোচনা করবেন খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে সমমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘ঐক্য’ গঠন প্রচেষ্টায় জামায়াতকে না রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে জোটের বাইরে জামায়াতকে না রাখার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। গত রবিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলীয় ঘরানার কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এ বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপির এ ধরনের সিদ্ধান্তকে পাত্তাই দিচ্ছে না জামায়াতে ইসলামী। দলটির একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বিএনপি জামায়াতকে রাখবে কি, রাখবে না— তাতে জামায়াতের কিছু আসে যায় না। বরং বিএনপির এখন যে অবস্থা— তাতে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে থাকবে কি না—সেটিই বিবেচনার সময় এসেছে।’ বৈঠক সূত্রে জানা যায়, খুব শিগগিরই জাতীয় পর্যায়ের এই বৃহত্তর ঐক্য গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে বিএনপি। গত শনিবার লন্ডন সফর শেষে ঢাকায় ফিরেই এ প্রক্রিয়া শুরু করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ২০-দলীয় জোটের বাইরের রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় প্রক্রিয়া শুরু করবেন খালেদা জিয়া। ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, প্রফেসর ড. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাসদ-এর মতো দলগুলোকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিবসহ দল সমর্থিত দায়িত্বপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবীরা। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গতকাল ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির কাছ থেকে কোনো আমন্ত্রণ আমরা পাইনি। একই কথা বলেন আ স ম আবদুর রবও। তবে তিনি এও বলেন, বিএনপিতে অনেক বন্ধুবান্ধব আছে যাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক কোনো কথা হয়নি। গাবতলী হাটে দেখা-সাক্ষাতে তো আর জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনা করা যায় না। জানা যায়, দলের বাইরে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি। তবে তার আগে প্রতিটি দলসহ প্রত্যেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলাদাভাবে কথা বলে আলোচনার বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করবেন। এরই মধ্যে তিনি কথাবার্তা বলা শুরু করে দিয়েছেন। জামায়াতসহ জোটের কোনো শরিক দলকে এই ঐক্য গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে না রাখার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের পর বিএনপি ধরেই নিয়েছে যে সরকার বিএনপির ঐক্যের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার বিএনপির আহ্বানে শেষ পর্যন্ত সাড়া না দিলে বিএনপি ২০-দলীয় জোটের বাইরে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যারা একমত হবে, তাদের নিয়ে এই ঐক্য গঠন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একমত—এমন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহত্তর প্লাটফর্ম গঠন করতে চায় বিএনপি। আর এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে রাখা না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন ওঠার পরই বিএনপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর