বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
যাচাই চলছে হাসনাতের কর্মকাণ্ড

তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু পাওয়া যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাহমিদকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু পাওয়া যায়নি

হাসনাত রেজা করিম - তাহমিদ হাসিব খান

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় আটক তাহমিদ হাসিব খানকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তার দাবি, তিনি দুই বান্ধবী নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন। অস্ত্রের মুখে তাকে পিস্তল হাতে নিয়ে হাঁটতে বাধ্য করেছিল জঙ্গিরা। অন্যদিকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে প্রকৌশলী হাসনাত রেজা করিম তার মোবাইলে ত্রিমাসহ তিনটি অ্যাপস নামিয়েছিলেন। ওই অ্যাপসগুলো দিয়েই ছবি আপলিঙ্ক করা হয় বলে দাবি তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, হাসনাত বরাবরই দাবি করে আসছেন, জঙ্গিদের চাপের মুখে তিনি তার মোবাইল ফোন দিয়ে অ্যাপস নামিয়ে দিয়েছিলেন এবং তা স্ত্রী-সন্তানের নিরাপত্তার জন্যই। তবে প্রকৃতপক্ষেই চাপের মুখে পড়ে হাসনাত এমন কাজ করেছেন কি না, নাকি পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে তা সম্পন্ন করা হয় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, পুরো সময়ই হাসিখুশি ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন হাসনাত।

সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী শাহরিয়ার খানের ছেলে তাহমিদ কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরেন্টোতে পড়েন। গুলশান হামলার দিনই তিনি কানাডা থেকে দেশে ফেরেন। দিনের বেলা বিশ্রাম নিয়ে ইফতারের পর দুই বান্ধবীকে নিয়ে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। তবে জিম্মি করার কিছু সময় পরই জঙ্গিরা তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে অস্ত্রের মুখে তারা তার হাতে পিস্তল তুলে দেয় বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি করেন তাহমিদ। তার দাবি, কেবল বন্ধুদের খাওয়াতেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।

খোঁজ নেই অমির : সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার ছেলে অমি তালুকদারের (১৮) কোনো খোঁজ পাচ্ছে না তার পরিবার। ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকেই নিখোঁজ অমি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা, হয়তো দেশেই আত্মগোপন করে আছেন অমি।

নিহত জঙ্গি শফিকুলের আরেক সহযোগী স্কুল শিক্ষক আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার : ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আমিরুল ইসলাম নামের অপর এক স্কুল শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে নিহত জঙ্গির সহযোগী হিসেবে গ্রেফতারকৃত স্কুল শিক্ষক মিলনের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটককৃত আমিরুল আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার আলহাজ আবু তালেব মোল্লা পাবলিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক। আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির আমিরুল ইসলামকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়াও আটককৃত স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম ২০১৪ সালের শুরুর দিকে তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া ছেড়ে আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকায় আসে। ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশরাফুলকে জবাই করে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরপর ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি সাভারের দক্ষিণ পাড়া এলাকায় শান্ত মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এ সংগঠনটির সদস্যরা। ওই বছরের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া শাখায় দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় নিহত হয় আটজন। এ ছাড়াও ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নবীনগর-কালিয়াকৈর মহাসড়কে চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে মুকুলকেও হত্যা করে এই জঙ্গিরা।

এসব ঘটনায় নিহত জঙ্গি শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলসহ আটককৃত দুই সহযোগীর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ওসি মহসিনুল কাদির ধারণা করছেন। আলহাজ আবু তালেব মোল্লা পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছগির হোসেন ইমু বলেন, আমিরুল ইসলাম মাদারী মাদবর মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ১৭ জুলাই তিনি তার স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে ঈদের ছুটি শেষে আমিরুল ইসলাম আর তার স্কুলে যোগ দেননি বলে তিনি জানান। গুলশান হামলার সঙ্গে এ চক্রটি জড়িত সে বিষয়টি তারা বুঝতে পারেননি বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাভার ও আশুলিয়া থানা এলাকার বিভিন্ন মহল্লা নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। আগামী এক মাসের মধ্যে এসব এলাকা থেকে জঙ্গি নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, আশুলিয়ার ভাদাইল এলাকা থেকে ১৬ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলাকারী নিহত শফিকুলের সহযোগী হিসেবে মিলন নামে এক স্কুল শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। গত রবিবার আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে মিলনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্কুল শিক্ষক আমিরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর