বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ এমপিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের এমপিদের এখন থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল বিকালে সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় দলীয় এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর তিন মাস বাকি আছে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরুন। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ান। এমপিদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর নির্দেশও দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীই দলের শক্তি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে নিজেদের নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় দ্রুততম সময়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এলাকার যুব সমাজ যাতে কারও প্ররোচনায় বিপথগামী না হয় সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অপরিচিত কেউ এলাকায় আসলে তার গতিবিধির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় থানাকে অবহিত করতে হবে। বৈঠকসূত্র জানায়, সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরি ও জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও এ বছরে শেষ নাগাদ জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। দেশের বন্যাউপদ্রুত এলাকায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট এমপিদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদের বর্তমান অধিবেশন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপিদের বিনা প্রয়োজনে ঢাকায় অবস্থান না করে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষকে সচেতন ও নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকায় যেসব উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে তা শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সভায় জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহিদ, হুইপ আতিকুর রহমান আতিক, অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. হাছান মাহমুদ, বিএইচ হারুন, শামীম ওসমান, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা আলোচনায় অংশ নেন। বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা আসনে যেসব এমপি আছেন, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা তৈরি করার দরকার নেই। তাদের আমি মনোনয়ন দেব না। আপনাদের যে জন্য এমপি বানিয়েছি সেই সংগঠন গোছানোর কাজ করুন। নিজে নিজে এমপি প্রার্থী হওয়া যাবে না, মনোনয়ন দেব আমি। কে মনোনয়ন পাবে সেটা আমি দেখব। আপনারা সংগঠনের জন্য কাজ করুন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে যেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, মানুষের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়—সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য জঙ্গিবাদবিরোধী যে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে বা হচ্ছে, সেই কমিটিগুলোর সঙ্গে প্রত্যেক এমপিকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এসব কমিটিগুলোকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করারও নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ তত্পরতায় নারীদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলের নারী সংগঠন ও নারী এমপিদেরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি সূত্র জানায়, সভায় বগুড়ার সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান ও নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রীরা এমপিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর নির্দেশ দেন। জানা যায় বৈঠকে একজন সংসদ সদস্য বলেন, সব পুলিশ আমাদের আপন না। তাই আমাদের সর্তক থাকতে হবে। তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কল্যাণপুরের জঙ্গি দমন তো পুলিশই করেছে। তারা ভালোভাবেই অভিযান পরিচালনা করেছে এবং সফল হয়েছে। আমাদের বিশেষায়িত সোয়াত বাহিনী ও পুলিশকে আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম রাতে অভিযান না চালিয়ে দিনের বেলায় চালাতে, যাতে সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা না হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রী এমপিদের উদ্দেশে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে অভিন্ন খুতবা দেওয়া হয়েছে, সেটি সব মসজিদে সঠিকভাবে পাঠ করা হচ্ছে কি না— সেটি নিশ্চিত করতে হবে। ‘বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চলছে, সেটি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়’— শোলাকিয়ার খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসঊদের নেতৃত্বে দেশের এক লাখ আলেমের যৌথ বিবৃতিও দেশজুড়ে প্রচার করতে হবে। কেউ যাতে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদে যুক্ত না হয়, বিপথে না যায়— অভিভাবক ও শিক্ষকদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এমপিদের কার্যকর ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর