শিরোনাম
বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জনস্রোতেই নির্মূল হবে জঙ্গিবাদ

বাদল নূর

জনস্রোতেই নির্মূল হবে জঙ্গিবাদ

পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ঐক্যন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, জঙ্গিবাদী ঘাতকরা পবিত্র ধর্মকে কলুষিত করছে। এদের হাতে দেশের সাধারণ মানুষ আজ আক্রান্ত। ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদ দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তুরস্ক, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও লিবিয়ায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত দেশি সন্তানেরা এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতেছে। ২০০ ধনাঢ্য অভিজাত শিক্ষিত স্বদেশি সন্তান উক্ত ট্রেনিং নিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক অভিযান এবং গণপ্রহরা, গণসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলাই হবে শহীদি আত্মার ফরিয়াদ এবং সময়ের দাবি। জনস্রোতে নির্মূল হবে জঙ্গিবাদ। এজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-যুবক-নারী এবং কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় কনভেনশনের ডাক দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে পঙ্কজ ভট্টাচার্য আরও বলেন, গত দেড় বছরে ৪৬টা টার্গেট কিলিংয়ে মোট ৪৮ জন নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ৬৬টি জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় দেশি-বিদেশি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। জঙ্গি মামলার বিচার ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। সর্বোপরি জঙ্গি আক্রমণের নিত্যনতুন কৌশল মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতার অভাব। হামলা চালানোর পরে অধিকাংশ জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অব্যাহত হত্যা-রক্তপাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারা এ দেশকে পাকিস্তানি মডেলে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বাঁচাতে ১৬ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদ ও দখলদার রুখে দিতে হবে। বিএনপিকে জামায়াত ত্যাগ করে এই জাতীয় ঐক্যে শামিল হতে হবে। প্রবীণ এই রাজনীতিক আরও বলেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে আইএস যুক্ত হয়েছে এ অজুহাতে বিদেশি দখলদারীদের হস্তক্ষেপের শঙ্কা নিয়ে ধুঁকছে প্রিয় স্বদেশ। রাজধানীর গুলশানে দেশি-বিদেশিদের জিম্মি ও নারকীয় হত্যা। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার ঘটনায় জাতি চিন্তিত। জঙ্গি ঘটনায় বিদেশি, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ধর্মগুরু, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, বাউল শিল্পী, মুক্তচিন্তকদের হত্যার অধিকাংশ ঘটনাকে সরকারের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ক্রসফায়ারে হত্যা জঙ্গিদের মূল কুশীলবদের আড়াল করার শামিল। তিনি আরও বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দোষারোপের রাজনীতির খেলা চলছে; যা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পক্ষে সহায়ক হয়। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যার পর্ব। সূচনা হয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির। পঁচাত্তরের পরে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন ছিল কার্যত আবার পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার আমল। একাত্তরের হত্যাকারীদের হাতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়ে এবং তাদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে বিরাজনীতিকরণ ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মহোৎসব চলে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত আমলে দেশ জঙ্গিবাদের উর্বর ক্ষেত্র হয়ে ওঠে। তারা ‘জঙ্গিবাদ’ ‘বাংলা ভাই’-কে মিডিয়ার সৃষ্টি আখ্যা দেয়। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে তারা জঙ্গি উত্থান ঘটায়। বিরোধী দল বিএনপি অদ্যাবধি জামায়াতবান্ধব তথা জঙ্গিবান্ধব বলে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ছাড়াও বাম প্রগতিশীল শক্তিরা আদর্শিক ও আপসহীন ঐক্যবদ্ধ জঙ্গি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর বিরোধী দল বিএনপি জঙ্গিবাদের কারখানা জামায়াতকে ছাড়তে পারছে না। আর সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করে রহস্যজনক কারণে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মৌলনীতি বাতিল করে রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িকীকরণের পথে রূপান্তর ঘটানো হয়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর সেনাশাসনের সব ফরমান ও আইন উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষিত হলে রাষ্ট্রীয় চার নীতি পুনঃস্থাপিত হওয়ার সুযোগ আসে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারে আসীন হয়ে কৌশলের নামে স্বৈরাচারের সাম্প্রদায়িকতা যুক্ত সংবিধানের সংশোধনীকে সংরক্ষণ করে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে, রন্ধ্রে, প্রশাসনের শাখা-প্রশাখায়, স্বাধীনতার শত্রু গণদস্যুদের অনুপ্রবেশ ঘটে। বঙ্গবন্ধু ’৭৪ সালে আওয়ামী লীগ সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল পাকিস্তানের আমলাতন্ত্র দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পরিচালনা করতে যাওয়া। অতঃপর তিনি আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মসমালোচনা এবং আত্মশুদ্ধির কথা বলেন। যা আজও অতিপ্রাসঙ্গিক বলে সচেতন মানুষ মনে করেন।

সর্বশেষ খবর