বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়লেন হিলারি ক্লিনটন

প্রতিদিন ডেস্ক

ইতিহাস গড়লেন হিলারি ক্লিনটন

আমেরিকার জন্ম হয়েছে ২৪০ বছর আগে। কালের পরিক্রমায় এখন সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশ আমেরিকা। কিন্তু গণতন্ত্রে কতটা পথ পেরিয়েছে। এই প্রশ্ন এলে কিছুটা হতাশ হতে হয় দেশটির নেতৃত্ব নিয়ে। কারণ এই সময়ে কোনো নারী যে দেয়নি দেশটির নেতৃত্ব। আর সেই গণতন্ত্রের প্রশ্নে অনেক এগিয়ে উপমহাদেশসহ গোটা ইউরোপ। সেই অপূর্ণতা এবার পূরণ করতে এলেন দেশটির সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। তবে একজন নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন সে দেশে? এখনো উত্তর জানা নেই কারও। তবে হিলারির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতেই সময় লেগে গেল প্রায় আড়াইশ বছর। আর তাতেই ইতিহাসে ঢুকে গেলেন হিলারি। এই ইতিহাস গড়ায় হিলারির সঙ্গী হলেন তার স্বামী সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও। তিনিও হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম নারী প্রার্থীর স্বামী। ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে হিলারি প্রার্থী ঘোষণা করে দলের নীতি নির্ধারকরা। আর স্ত্রীর এমন সাফল্যে আপ্লুত ৬৯ বছর বয়সী বিল ক্লিনটন। সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, ‘আমার জীবনে দেখা সেরা পরিবর্তনের রূপকার হলেন হিলারি। আর সেই আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু।’ স্ত্রীর ইতিহাস গড়ার দিনে বিল ক্লিনটন ফিরে গেলেন ৪৫ বছর আগে। ‘১৯৭১ সালের বসন্তে এক মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। সেই মেয়েটিই হিলারি’, তার মন্তব্য, ‘আর আমি আমার জীবনের  সেরা বন্ধুটিকেই বিয়ে করেছি’। পৌনে এক ঘণ্টা ভাষণ দেন বিল ক্লিনটন। গোটা বক্তব্যেই ঝরে পড়েছে স্ত্রীর প্রতি অগাধ প্রেম আর শ্রদ্ধা। তার  ভাষণের পর ভিডিও কনফারেন্সে কৃতজ্ঞতা জানান হিলারি। বলেন, ‘কোনো ছোট মেয়ে যদি এই মুহূর্তে আমার এই কথাগুলো শোনো, তবে আমি  তোমাদের বলছি, আমি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হব। কিন্তু ভবিষ্যতে  তোমাদেরই মধ্যে কেউ এই পদে বসবে।’  হোয়াইট হাউস কিন্তু অনেক পরিচিত হিলারির। কারণ ক্লিনটন যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন, তখন আট বছর সেখানে থাকেন হিলারি। এই সময়ে হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা থাকাকালে স্বামী ক্লিনটনের সংকটে স্ত্রী হিসেবে হিলারির ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। বিশেষ করে বিল ক্লিনটন যখন  হোয়াইট হাউসের শিক্ষানবিস কর্মী মনিকা লিউনেস্কির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন স্ত্রী হিসেবে হিলারি তাকে ছেড়ে যাননি। পাশে থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে সহায়তা করেন।

হিলারির প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিল ক্লিনটন বলেন, ‘হিলারি অসম্ভব স্মার্ট। অসম্ভব ব্যক্তিত্বশীল। ভালোবাসা আর আদর-যত্নে ভরিয়ে রাখা একজন মানুষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘হিলারি সব সময় সামনে এগোনোর পক্ষে। তিনি কে, এটা বোঝানোর জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’ ‘বাস্তব দুনিয়ায় জীবন অনেক জটিল। প্রকৃত পরিবর্তন অনেক কঠিন, মন্তব্য করে হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটন বলেন, ‘তবে আপনারা একজন প্রকৃত ব্যক্তিকে মনোনীত করেছেন।’ হিলারিকে কেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা উচিত ৪৫ মিনিটের ভাষণে বিল ক্লিনটন যুক্তি দিয়ে তা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, হিলারির জয় আফ্রিকান-আমেরিকান, স্বপ্নহীন-হতাশ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করবে; তাদের সবাইকে শক্তিশালী করবে।

এই দম্পতির একমাত্র মেয়ে চেলসি ক্লিনটন। চেলসি পৃথিবীর সেরা মাকে  পেয়েছেন মন্তব্য করে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মা হিসেবে তিনি সেরা।’ এই গুণ  দেশ পরিচালনায় ভীষণভাবে কাজে দেবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

হিলারি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আবার  হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হবেন এই দম্পতি। বিল ক্লিনটন যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কাজেই সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের স্বামী হিসেবে ‘ফার্স্ট  জেন্টেলম্যান’ না ‘ফার্স্ট ম্যান’ হবেন, এমন জটিলতায় পড়তে হবে না তাকে। সাবেক প্রেসিডেন্টের যথাযোগ্য মর্যাদাই থাকবে তার। এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর