শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিলেছে আরেক জঙ্গির পরিচয় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিহত জঙ্গি তারেক গুলশান হামলার প্রশিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিলেছে আরেক জঙ্গির পরিচয় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বিল্ডিংয়ে (তাজ মঞ্জিল) পুলিশের অভিযানে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে আরও একজনের নাম-পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে তার পরিচয় পাওয়া যায়। এদিকে কল্যাণপুরে ‘অপারেশন স্টম-২৬’-এ হতাহত ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। বুধবার রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজালাল আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন (নম্বর-৪৮)। এতে অভিযানে নিহত নয় জঙ্গি ও আহত একজনসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকাল সর্বশেষ পরিচয় পাওয়া জঙ্গির নাম রায়হান কবির। বাবার নাম শাজাহান কবির। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউনিয়নের পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামে। ২০১৩ সালে সে একই ইউনিয়নের দামুরচাকলা এলাকার দেওয়ান সালেহ আহম্মেদ মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। এ নিয়ে নিহত নয়জনের মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলল। আগে যাদের পরিচয় সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছিল তারা হলো— জোবায়ের হোসেন, সাজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো, আবদুল্লাহ, আবু হাকিম নাঈম, তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান খান ও মতিয়ার রহমান। এদের মধ্যে সাজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো আমেরিকান পাসপোর্টধারী। র‌্যাবের প্রকাশিত সর্বশেষ সংশোধিত নিখোঁজ তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে নাম ছিল অর্কের। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ পরিচয় পাওয়া রংপুরের পীরগাছার রায়হান কবির ওরফে তারেক নির্দেশক এবং প্রশিক্ষক হিসেবে জঙ্গি দলের সঙ্গে ছিল। তার বিষয়ে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। পুলিশ তাকে তারেক নামে চিনত। তারেক ছদ্ম নামে রায়হান কবির ঢাকা অঞ্চলে জেএমবির জঙ্গি কর্মকাণ্ডের নির্দেশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করত। এর আগে সে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের প্রত্যন্ত এক চরে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। হুমায়ুন কবিরের ছদ্মনাম ছিল তারেক। সে আশুলিয়ার বারুইপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলায় জড়িত ছিল বলে সেই মামলায় তাকে আসামি করা হয় এবং পুলিশের খাতায় তার নাম লেখা ছিল তারেক। মনিরুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুর ও গুলশানে হামলাকারী দুটি জঙ্গি দলের মধ্যে যোগাযোগ ছিল। এই দুই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যারা আর্থিক মদদ ও উসকানিদাতা তাদের সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, নিহত নয়জনের মধ্যে তিনজন সাজাদ রউফ অর্ক, তাজ-উল-হক রাশিক ও আকিফুজ্জামান খান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। জানা গেছে, বাংলাদেশে জেএমবির যে ভগ্নাংশটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে এ অংশের শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিয়মিত যেত বলে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। দুই বছর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম দেশে ফিরে এসে আত্মগোপন করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে মিরপুর থানায় করা মামলার এজাহারে সেই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা : বুধবার রাতে মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহজালাল আলম বাদী হয়ে কল্যাণপুরে হতাহত ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভূইয়া মাহবুব হাসান। এদিকে কল্যাণপুরে অভিযানে নিহত ও আহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে দায়ের করা মামলায় ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। গতকাল মামলার এজাহার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পৌঁছানোর পর মহানগর হাকিম মো. সাজ্জাদুর রহমান পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার তারিখ ঠিক করে দেন। গত ২৫ জুলাই রাতে কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর জাহাজ বাড়ি খ্যাত তাজ মঞ্জিলের ৫ম তলায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। পরে ২৬ জুলাই ভোরে ওই ভবনে ‘অপারেশন স্টর্ম-২৬’ নামক অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের ঘণ্টাব্যাপী গুলি বিনিময় হয়। এতে নয় জঙ্গি নিহত এবং রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামে এক জঙ্গিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। এদিকে জাহাজ বাড়ি থেকে আটক মাজহারুল ইসলাম, মাহফুজুল আলম, মোমিন উদ্দিন ও জাকির হোসেনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন মিরপুর থানার এসআই বজলার রহমান। শুনানি শেষে আদালত তাদের দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে গত বুধবার বাড়ির মালিক মমতাজ পারভীনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর