রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

আগ্রহ থাকলেও দল ভাঙার শঙ্কায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

আগ্রহ থাকলেও দল ভাঙার শঙ্কায় বিএনপি

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই কখনো ‘মধ্যবর্তী’, কখনো ‘আগাম’ নির্বাচন দাবি করে আসছে বিএনপি। এখনো আগাম নির্বাচন চায় দলটি। বিএনপি মনে করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যখনই হবে, বিএনপি তাতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। আর এতে প্রস্তুতি নিতেও কোনো সমস্যা হবে না। প্রয়োজন শুধু লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের। তবে আগাম নির্বাচনে আগ্রহ থাকলেও নানামুখী শঙ্কাও বিরাজ করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বে। দলের বড় একটি অংশ মনে করছে, সরকার বিএনপিকে প্রতিকূল অবস্থায় রেখেই আগাম নির্বাচন দেবে। সেটা ২০১৭-১৮ সালের যে কোনো সময় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভাঙনের মুখে ফেলতে পারে। মামলার ফাঁদে থাকা দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্যও ঘোষণা করতে পারে। অবশ্য এরই মধ্যে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ কয়েকজন নেতাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই মেয়াদে কোনো নেতাই আপিল করবেন বলে মনে হয় না।

এদিকে খালেদা-তারেক নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ হলে দল ভাঙনের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখছেন নেতা-কর্মীরা। নানামুখী চাপে পড়ে সিনিয়র নেতাদের একটি অংশই নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারেন বলে মনে করেন তারা। আবার নতুন কোনো দলও গড়তে পারেন কেউ কেউ। নেতা-কর্মীদের শঙ্কা— এমনই একটি প্রতিকূল অবস্থায় আগাম নির্বাচন দিতে পারে সরকার। সে ক্ষেত্রে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া-না যাওয়া একই কথা। অবশ্য নানা প্রতিকূলতার পরও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই বিএনপির বড় একটি অংশ। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেও সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিক। প্রয়োজনে আমাদের প্রথম সারির ১৫০০ নেতাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হোক। তার পরও সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবে শেখ হাসিনাকে রেখে তো কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সরকারের উদ্দেশ্য যদি হয় বিএনপিকে ভেঙে বা নেতাদের সাজা দিয়ে যেনতেন একটি নির্বাচন, তাহলে তো বলার কিছু নেই।’ বিএনপি নেতাদের আশঙ্কা, দুর্নীতির মামলায় সাজার পর খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে দলের একটি অংশকে হাত করে সরকার নির্বাচন দিতে পারে। এ নিয়ে গুঞ্জন দলের ভিতরে-বাইরে দীর্ঘদিন থেকেই। তারেক রহমানের সাত বছর সাজার রায়ের পর ওই গুঞ্জন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে খালেদা জিয়ার সন্দেহের কথা তার বিভিন্ন বক্তৃতায় উঠে এসেছে। অনেক নেতার কথাবার্তা ও বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরাও সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বেগম জিয়া। কিছু নেতার আচরণে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও সংশয়ে। জানা যায়, বিএনপির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাই একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতাও রয়েছেন। কর্মসূচিতে গেলেও সরকারবিরোধী কঠোর কোনো কথাবার্তা বলেন না। এদেরই সন্দেহের চোখে দেখছেন মাঠের কর্মী-সমর্থকরা। সামনে আবার কোনো দুর্যোগ এলে এসব নেতা বিএনপি থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন বলেও শঙ্কা তাদের। বিএনপিকে ভেঙে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেই সরকার আগামী নির্বাচন দিতে পারে বলে দলের ভিতর-বাইরে আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা সরকার বহু আগে থেকেই করে আসছে। কিন্তু সরকারের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। এখনো করছে, ভবিষ্যতেও তারা সেই তত্পরতা চালাতে পারে। বিএনপির অনুকূল পরিস্থিতিতে এ সরকার নির্বাচন দেবে, তা কেউই বিশ্বাস করে না। তবে নির্বাচনের জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর থেকেই আমরা সেই দাবি করে আসছি।’ বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা থাকার পরও বিএনপি নতুন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে নতুন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। বিএনপি শেখ হাসিনার বাইরে নতুন নির্বাচনের দাবি করে আসবে। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি না মানলে শেখ হাসিনার অধীনেও একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি তুলতে পারে। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, সামনে নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। তবে দেশি-বিদেশি নানা চাপ অব্যাহত থাকলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিএনপি সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সময়ের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এ সরকার সুবিধাজনক অবস্থায় রেখে নির্বাচন দেবে, তা কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। নির্বাচনের আগে নেতাদের সাজাও দিতে পারে, দলকে ভাঙনের মুখেও ফেলতে পারে। কিন্তু বিএনপি অতীতেও সব বাধা অতিক্রম করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।

সর্বশেষ খবর