সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

নিখোঁজ ৬৮ জনকে নিয়ে আতঙ্ক

আগস্টজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা । সারা দেশে পুলিশের গোপন নির্দেশ

সাখাওয়াত কাওসার

নিখোঁজ ৬৮ জনকে নিয়ে আতঙ্ক

নিখোঁজ ৬৮ জনকে নিয়ে জনমনে আতঙ্ক। সম্প্রতি এলিট ফোর্স র‌্যাবের দেওয়া এই নিখোঁজ ব্যক্তিরা কখন কোথায় ঝাঁপিয়ে পড়ে এ নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই সাধারণ মানুষের। শুধু সাধারণ মানুষই নন, এদের নিয়ে কড়া সতর্ক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। নিখোঁজ ব্যক্তিদের অবস্থান নিশ্চিত করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা। তবে আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরী, জাপান প্রবাসী সাইফুল্লাহ ও’জাকি, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ টি এম তাজউদ্দীনকে নিয়েই যেন দুনিয়ার ব্যস্ততা র‌্যাব-পুলিশসহ গোয়েন্দাদের। এরই মধ্যে রাজধানীতে কল্যাণপুরের মতো উত্তরা ও মিরপুরে আরও দুটি জঙ্গি আস্তানা রয়েছে এমন তথ্যও দারুণ ব্যস্ত রেখেছে গোয়েন্দাদের। অন্যদিকে পুরো আগস্ট মাস রাজধানীসহ সারা দেশে কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। পর্যায়ক্রমে ওই নির্দেশনা পৌঁছেছে রাজধানীসহ সারা দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে। তবে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিখোঁজ তালিকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। নিখোঁজ ওই সব ব্যক্তির ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আগস্ট মাস ঘিরে সব সময়ই বিশেষ সতর্ক অবস্থানে থাকে র‌্যাব। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনার কারণে আমরা আরও বেশি সতর্ক।’

এদিকে রাজধানীতে আরও দুটি জঙ্গি আস্তানার খোঁজে মাঠে রয়েছেন গোয়েন্দারা। কল্যাণপুরের মতো মিরপুর ও উত্তরায় ওই দুটি আস্তানা রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করছেন তারা। এ ছাড়া আইএসের কথিত বাংলাদেশ প্রধান তামিম চৌধুরীর প্রকৃত অবস্থান নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটি সূত্র বলছে, খোদ রাজধানীতেই অবস্থান করছেন তামিম। তার দিকনির্দেশনা অনুসারেই এখনো চলছে বিভ্রান্ত উগ্রপন্থি যুবকেরা। তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালেই কানাডা থেকে পলাতক। এর মধ্যে কিছুদিন অন্য দেশে অবস্থান করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়েও তামিমের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। অভিযানের দুই দিন আগেও তামিমের ঢাকায় অবস্থান সম্পর্কে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এর পর থেকেই তামিমের ব্যাপারে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না গোয়েন্দারা। কেউ কেউ বলছেন, কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে তিনি পাশের দেশে প্রবেশ করেছেন। অন্যদিকে জাপান প্রবাসী সাইফুল্লাহ ও’জাকি জাপান থেকে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এমন তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের কাছে। দেশে অবস্থানরত জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হচ্ছে বলে ধারণা তাদের। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এ টি এম তাজউদ্দীনের সর্বশেষ অবস্থান সিরিয়ায় হলেও এখন তিনি কোথায় আছেন নিশ্চিত হতে পারেননি গোয়েন্দারা। সূত্র বলছে, তবে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী মে মাসের শুরুতে নিহত নিবরাস ইসলাম, মোবাশ্বির, জায়েদসহ আরও কয়েকজন জঙ্গি ঝিনাইদহে অবস্থান করছিলেন। পরে তারা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বগুড়ায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে তারা বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জে স্থানান্তর হন। সিরাজগঞ্জে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন জঙ্গি শফিউল। পুনরায় বগুড়ায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা হয় জঙ্গি উমায়ের, সাদ ও সায়াদের সঙ্গে। এই সাতজনই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলায় অংশ নেন। জঙ্গি নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আগে যে পরিকল্পনা নিয়ে জঙ্গিরা এগোচ্ছিল, তা থেকে তারা পিছু হটতে বাধ্য। একের পর এক অপারেশন তাদের মনোবলে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। আগের অবস্থানে অবশ্যই তারা নেই। পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) এ কে এম শহীদুর রহমান বলেন, অন্য সময়ের মতোই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে গত এক মাসে কয়েকটি ন্যক্কারজনক ঘটনার কারণে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দরসহ দেশের সব কটি জেলায় এ-সংক্রান্ত বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এদিকে জঙ্গি আস্তানার ব্যাপারে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় গোয়েন্দাদের একাধিক টিম কাজ করছে। নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে কয়েকটি সন্দেহজনক এলাকা। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া মাত্রই সেখানে অভিযান চালাবে তারা। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দুর্বৃত্তরা যাতে আগস্ট মাসে কোনো অপতত্পরতা চালাতে না পারে সে জন্য প্রতিটি বাহিনীর প্রধানের কাছে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এসব বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে সারা দেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে। ১ জুলাই হলি আর্টিজান ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহে নারকীয় ঘটনার পর জঙ্গিরা আরও হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা মাথায় রেখেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিদের আস্তানায় বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে গুরুতর অবস্থায় এক জঙ্গিকে আটক করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানে নয়জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এদের সবাই দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতার নির্দেশ : দেশকে পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা করতে পারে জঙ্গিরা— এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন  বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। গতকাল দুপুরে কুর্মিটোলা বিমান সদর দফতর ‘বলাকায়’ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ‘দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তায় করণীয়’ সম্পর্কিত সভায় এ নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, বিমান ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিতকল্পে সরকার সবকিছু করতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণসহ বিমানবন্দরে আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে। রাশেদ খান মেনন বলেন, আইএস সদস্যদের বিভিন্ন দেশে নাশকতার উদ্দেশে পাঠানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা  যেন বাংলাদেশকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ক্ষেত্র না বানাতে পারে সে জন্য সবাইকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।

 বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব এস এম গোলাম ফারুক, জি এম সিকিউরিটি মেজর (অব.) মো. আলী মোস্তফা মামুন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত বণিক, বিমান ফ্লাইং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান, বিমান সিবিএ সভাপতি মাশিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বৈঠকে বিমানবন্দরের সিকিউরিটি সংক্রান্ত সরঞ্জামাদি ক্রয়, এপিবিএন, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের সঙ্গে সমন্বয়, সিকিউরিটি কনসালটেন্ট কোম্পানি রেড লাইনের কার্যক্রম, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কার্গো কমপ্লেক্সসহ আসন্ন হজ ফ্লাইট সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

সর্বশেষ খবর