সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পরিকল্পনাকারীরা অধরা পুলিশ বলছে চিহ্নিত

গুলশান রেস্তোরাঁয় হামলার এক মাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিকল্পনাকারীরা অধরা পুলিশ বলছে চিহ্নিত

রাজধানীর কূটনৈতিক জোন গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার এক মাস পূর্ণ হলো। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এ জঙ্গি হামলার মাস পার হলেও পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্যের নায়করা এখনো অধরা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞের ‘মাস্টারমাইন্ড’ চিহ্নিত হয়েছে। শনাক্ত হয়েছে অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারীরা। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ইতিপূর্বে এ বিষয়ে বলেছেন, মূল হামলাকারী জঙ্গিরা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। তবে তাদের পেছনে সহযোগী হিসেবে আরও একটি জঙ্গি গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপটির বেশ কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বেশ কয়েকজন নজরে রয়েছে। নৃশংস এই হামলার ঘটনাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার নেপথ্য নায়করা শনাক্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ এবং সন্দেহভাজন অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। গত ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জঙ্গিদের ছোড়া বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্যও। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। এদের মধ্যে পাঁচজনই নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সদস্য। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ৩৩ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৪ জুলাই রাতে গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটকে (সিটি)। চাঞ্চল্যকর এ জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলার তদন্তও চলছে কঠোর গোপনীয়তায়। প্রকাশ্যে কোনো কথা না বললেও তদন্ত কর্মকর্তারা আকারে ইঙ্গিতে গুলশান হামলার নেপথ্যের ক্লু উদ্ঘাটন ও পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতাসহ মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করা গডফাদারদের শনাক্ত করেছেন বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এখন এসব তথ্যের প্রমাণ সংগ্রহের কাজ করছেন গোয়েন্দারা। প্রমাণ সংগ্রহ হলেই নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করার কথা ভাববে গোয়েন্দারা। এর মধ্যে গুলশান হামলার মূল মাস্টার মাইন্ড তামিম আহম্মেদ চৌধুরীসহ পাঁচ জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হলেও জঙ্গিদের প্রশিক্ষক রায়হান কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর পরই রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর গোপনীয়তায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের এ অভিযানে গুলশান হামলায় জড়িত জঙ্গিদের শতাধিক সহযোগীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়। এর মধ্যে মোস্ট ওয়ান্টেড কিছু জঙ্গি আটকও হয়। তাদের বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকেই গুলশান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশি নেপথ্যের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে বেরিয়ে আসে হামলার মূল উদ্দেশ্য, পরিকল্পনাকারী, অর্থদাতাদের নাম। কারা কীভাবে এসব জঙ্গিকে মোটিভেটেড করছে এসব বিষয়েও বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গুলশান হামলার মাস্টার মাইন্ড তামিমসহ কয়েক জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ভারত সরকারকে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয় সে দেশের সরকারকে। গুলশান হামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ও আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তির সহায়তায় জঙ্গিদের ব্যবহৃত অ্যাপস থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গুলশান হামলার নেপথ্যে কারা পরিকল্পনাকারী, কোথায় বসে পরিকল্পনা হয়েছে, কাদের কাদের ভূমিকা ছিল এর অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়েছে। এসব তথ্যের প্রমাণ সংগ্রহের কাজ করছে তদন্তকারীরা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার তদন্তে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নর্থ সাউথ  ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রো-ভিসি ও স্কুল অব হেলথ অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দীন আহসান, তার ভাগ্নে আলম চৌধুরী, ভাটারা এলাকার একটি বাড়ির ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান তুহিন ও শেওড়াপাড়ার একটি বাড়ির মালিক মিরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। অন্যদিকে, হলি আর্টিজানের দুই কর্মচারী ওয়েটার লাজারুস সরেন (৫০) ও জাকিরুল ইসলামকে (২২) ডিবি পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মূলত হামলাকারীরা ভাটারা এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রো-ভিসি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। ওই বাসা থেকেই হামলাকারীরা সে দিন হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়েছে এটা গোয়েন্দাদের কাছে পরিষ্কার। এ ছাড়া হামলার আগে রাজধানীর মিরপুরেও তাদের একটি আস্তানা ছিল যেখানে তারা এ হামলার পরিকল্পনার বিষয়েও বৈঠক করে। এসব বিষয় পরিষ্কার হলেও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি জঙ্গিদের শিকড় খোঁজার জন্য আরও তদন্তের কাজ চলছে। গুলশান জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত যাদের আটক করা হয়েছে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।

চার সাক্ষীর জবানবন্দি : হলি আর্টিজানে হামলার মামলায় আরও চার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ঢাকার পৃথক চার হাকিম আদালতে সাক্ষীরা এ জবানবন্দি দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন আদালতের কাছে।

সর্বশেষ খবর