শিরোনাম
সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বে-টার্মিনাল বদলে দেবে আমদানি রপ্তানির চিত্র

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বে-টার্মিনাল বদলে দেবে আমদানি রপ্তানির চিত্র

ক্রমবর্ধমান কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রণীত ৩০ বছর মেয়াদি (২০৪৩ সাল) মহাপরিকল্পনা অনুসারে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে নির্মিত হতে যাচ্ছে বে টার্মিনাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে ১০টি শিপটুশোর গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলে ২০১৭ সালে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা দাঁড়াবে ২৩ দশমিক ৬০ লাখ টিইইউস-এ (টুয়েন্টি ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিট)। তবে বছরে ১০ হাজার টিইইউস বর্ধিত হারে ২০১৯ সালে বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা দাঁড়াবে ২৩ দশমিক ৮০ লাখ টিইইউস। অথচ ওই সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে ২৬ দশমিক ৪৬ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। ফলে ওই বছর বন্দরের সক্ষমতা ঘাটতি থাকবে প্রায় ২ দশমিক ৬৬ লাখ টিইইউস। নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা না হলে ২০২২ সালের দিকে সক্ষমতা ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ১০ দশমিক ৫২ লাখ টিইইউস-এ। তার আগেই বে টার্মিনাল ও লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে অপারেশনের আওতায় আনা না হলে এই বিপর্যয় মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে জানান বন্দর বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম বন্দর হতে ৬ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ হবে আগামী দিনের বন্দর বে টার্মিনাল। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে উত্তর হালিশহর এলাকায় জেগে ওঠা ওই চরে কোনো জনবসতি ও চাষাবাদ নেই। উপকূল সংলগ্ন ১১ কিলোমিটার প্রলম্বিত এই চর ও উপকূল তীররেখার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে একটি চ্যানেলের সৃষ্টি হয়েছে। যার গভীরতা ৭ থেকে ১০ মিটার। এখানে কনটেইনার টার্মিনালসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা মিলবে অনায়াসে। প্রস্তাবিত এলাকাটির অধিকাংশ ভূমি খাস ও অব্যবহূত জমি। ইতিমধ্যে বে টার্মিনালের জন্য ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া নদীর অংশ, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট চ্যানেল ও জেগে ওঠা চরের অংশ নিয়ে বে টার্মিনালের মোট ভূমির পরিমাণ দাঁড়াবে আড়াই হাজার একরে। বন্দরের সদস্য (পরিকল্পনা ও প্রশাসন) মো. জাফর আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ জরুরি। পাশাপাশি দ্রুত বিকল্প বন্দর সুবিধা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো নির্মাণই দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সম্ভব।

বে টার্মিনালের বিশেষত্ব : বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বর্তমানে ৯ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ ভিড়ানো বা বার্থিং করা যায়। বে টার্মিনাল নির্মিত হলে ১০ থেকে ১২ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ অনায়াসে বার্থিং করা যাবে। একইভাবে কর্ণফুলী চ্যানেল আঁকাবাঁকা হওয়ার কারণে ১৯০ মিটারের অধিক দৈর্ঘ্যের জাহাজ বার্থিং সম্ভব হয় না। বে টার্মিনালে এ ধরনের কোনো সমস্যা না থাকায় ১৯০ মিটারের চেয়ে বড় জাহাজ বার্থিং সম্ভব হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে আগত বর্তমান জাহাজগুলো সর্বোচ্চ ১৮০০ কনটেইনার বহন করতে পারে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) রিপোর্ট অনুযায়ী, বে টার্মিনালে ৫ হাজার কনটেইনার বহনকারী জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বার্থিং-অপারেশন সুবিধা : চট্টগ্রাম বন্দরে রাতে ও ভাটার সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে, কেবল জোয়ারের সময় জাহাজ চলাচল হয়। অর্থাৎ রাতদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচল হয়। কিন্তু বে টার্মিনালে ২৪ ঘণ্টাই নেভিগেশন সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ ১৯টি জাহাজ বার্থিং করা যায়, কিন্তু বে টার্মিনালে ৩০ থেকে ৩৫টি জাহাজ একই সময়ে বার্থিং করা যাবে। এতে অল্প সময়ে অধিক পণ্য হ্যান্ডলিং হবে এবং জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমে আসবে।

সড়ক ও রেল সংযোগ সুবিধা : চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রোড কানেকটিভিটি একটি মাত্র সড়ক দিয়ে। যাতে বন্দর ট্রাফিক ও সিটি ট্রাফিক এক সঙ্গেই হয়ে থাকে। বে টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পোর্ট এক্সেস রোড ও চার লেন বিশিষ্ট সড়ক। যেখানে সিটি ট্রাফিক চলাচল থাকবে সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া বে টার্মিনাল থেকে নদীপথে ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে লাইটার জাহাজের গমনাগমন ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার দূরত্ব কমে আসবে এবং রেল সংযোগ স্থাপন চট্টগ্রাম বন্দরের থেকেও সহজতর হবে।

আধুনিক ও বহুমুখী বন্দর : ১২৯ বছরের পুরনো বন্দর চট্টগ্রাম। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু বে টার্মিনালকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে তা সহজেই আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বে টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত থাকছে কয়লা ও সিমেন্ট ক্লিংকার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য শেডসহ আলাদা জেটি। এ ছাড়া পতেঙ্গার ঘনবসতি ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে জ্বালানি তেলের স্থাপনা সরিয়ে বে টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বে টার্মিনালের এরিয়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬ গুণ বড়। বন্দরের ১ নম্বর জেটি থেকে এনসিটি পর্যন্ত অপারেশনাল এরিয়ার পরিমাণ ৩৩০ একর। কিন্তু বে টার্মিনালের জন্য ইতিমধ্যে ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। সমুদ্র থেকে ভূমি পুনরুদ্ধারের পর দাঁড়াবে ২ হাজার ৫০০ একরে।

সর্বশেষ খবর