সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছলচাতুরী করছেন ট্যানারি মালিকরা

—প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে বন্যা শুরু হয়েছে। বন্যা মাঝেমধ্যেই আসে। কাজেই বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর না হওয়ায় বিরক্ত মনোভাব প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগ থেকে যাতে না সরতে হয় সেজন্য ট্যানারি মালিকরা নানা ছল-চাতুরী করছেন। সাভারের হরিণধরা এলাকায় আমরা ট্যানারি শিল্প তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে ট্যানারি মালিকরা অযথা দেরি করছেন। তাদের বারবার বলা সত্ত্বেও নানা ছলছুতা নিয়ে কেন দেরি করে আমরা জানি না। এটা করা ঠিক নয়। তারা (মালিকরা) দ্রুত ট্যানারি স্থানান্তর করলে এ জায়গাটা (হাজারীবাগ) পরিবেশ আবার ফিরে পাবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৬’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ ও বন সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ ও বন অধিদফতরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মণ্ডল এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের স্লোগান, ‘বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ, বাঁচাই প্রকৃতি-বাঁচাই দেশ’, আর বাংলাদেশে এ দিবসের স্লোগান ‘জীবিকার জন্য গাছ, জীবনের জন্য গাছ।’ প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’, ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন’ এবং বৃক্ষরোপণে ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ তুলে দেন বিজয়ীদের হাতে। বিতরণ করা হয় সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক। প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণের পর বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন। বন্যা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নদীগুলোর ড্রেজিং এবং পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। কোথাও বন্যা হলে বন্যার জন্য জায়গা রাখা এবং পানির প্রবাহ যেন ঠিক থাকে সে ব্যবস্থাসহ অনেক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা যেমন আমাদের ক্ষতি করে, তেমনি উপকারও করে। যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় এই বন্যা সেটা পূরণ করে। তাছাড়া বন্যা ব-দ্বীপের ভূমিও পুনর্গঠন করে। বন্যায় যেন মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়, তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমাদের নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি বৈচিত্র্যপূর্ণ এই দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। বনায়নে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বনায়নে গুরুত্ব দিয়েছি। সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। ৯ শতাংশ বনভূমি থেকে এখন ১৭ শতাংশে উন্নীত করেছি। এটা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নিতে হবে। শেখ হাসিনা জানান, সরকার নিজস্ব তহবিল গঠন করে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গাজীপুরে সাফারি পার্ক, ইকো পার্কসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আমাদের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, সেটা কমাতে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, যেখানেই শিল্পাঞ্চল সেখানেই পুকুর, লেক বা অন্য কোনো জলাধার থাকতে হবে। এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষিত হবে। আগুন লাগলে তা নেভাতেও পানি দরকার, সেক্ষেত্রে এ জলাধার কাজে লাগবে। রাজউকের প্রতি নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় শিল্পাঞ্চলের অনুমোদন দেওয়ার আগে অবশ্যই সেখানে জলাধার রাখার বিষয়টি রাজউক ও গৃহায়ণ নির্মাণ কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত হতে হবে। রাজধানী ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে তা ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হচ্ছে। পরিবেশ রক্ষা সবারই দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করি, দেশের প্রতিটি মানুষ বৃক্ষরোপণের দিকে মনোযোগ দেবেন। দলের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি নেতা-কর্মীর প্রতি নির্দেশ রয়েছে অন্তত তিনটি (বনজ, ভেষজ ও ফলদ) করে গাছ লাগাতে। আশা করি দেশের সব মানুষই বৃক্ষরোপণের দিকে দৃষ্টি দেবেন। পরিবেশ রক্ষায় ‘সবার’ দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে আজকে বিশ্বের কাছে একটা ‘দৃষ্টান্ত’ স্থাপন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস ইফেক্টের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে সবুজ অর্থনীতি গড়ার পথই একমাত্র বিকল্প। তিনি প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব ভালোভাবে নিরূপণ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর