মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্রেতা মনে অস্বস্তি কাটেনি

পোশাক কারখানা মালিকরা ক্রয়াদেশের অপেক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার এক মাস পার হলেও এখনো বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশ সফরের বেলায় ভয় দূর হয়নি। জঙ্গি প্রশ্নে পোশাক খাতের এই ক্রেতারা অস্বস্তিতে আছেন বলে জানিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। তারা আরও জানান, বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক ক্রয় করেন ইউরোপের ক্রেতারা। তাই বাংলাদেশ সফরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভয় কাজ করছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের মধ্যে। গুলশান ঘটনার রেশ ধরে গত মাসেই আন্তর্জাতিক বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি বাংলাদেশে তাদের কর্মকর্তাদের সফর স্থগিত করে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের অনেকেই বাংলাদেশে না এসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও নিজ দেশে বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। কেউ আবার বাংলাদেশে তাদের কর্মীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে। কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এখন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর  নেতারা বলছেন, সাধারণত জুলাই ও আগস্ট মাসে বিদেশি ক্রেতাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ছুটিতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যান। এ সময় তারা খুব প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে রপ্তানি ক্রয়াদেশ নিয়ে আসেন না। বছরের মূল ক্রয়াদেশ অবশ্য সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আসার কথা। সে সময় যদি ক্রেতারা বাংলাদেশে না আসেন বা ক্রয়াদেশ না দেন, তবে তা হবে উদ্বেগের বিষয়। তারা বলেন, ১ জুলাইয়ের গুলশান হামলার নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পোশাক খাতের ওপর পড়েছে। তবে শিগগিরই বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে এবং ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে পারলে এই খাতে বিদেশি অর্ডার কমবে না বলে তারা আশাবাদী। কানাডার ব্র্যান্ড ‘সিয়ার্স’-এর একটি প্রতিনিধি দলের সম্প্রতি বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও ভারত আসার কথা ছিল। কিন্তু গুলশান ঘটনার পর সিয়ার্স বাংলাদেশে তাদের সফর বাতিল করে রপ্তানিকারককে ভারত ও থাইল্যান্ডে যেতে বলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ব্র্যান্ড অ্যারো পোস্টালও একই কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠকের জন্য বলেছে। এমনকি আগামী সেপ্টেম্বরে অন্যতম বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচ অ্যান্ড এম-এর ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি বড় প্রদর্শনী আয়োজনের কথা ছিল। সেই অনুষ্ঠানটিও স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে গুলশান ঘটনার পর জাপানের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ইউনিকোলো কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের সফর স্থগিত করে। এর বাইরে এইচ অ্যান্ড এম বাংলাদেশে তাদের কর্মীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেয়। ইউরোপীয় আরেকটি বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এল কোর্তে ইংগেলস বাংলাদেশ থেকে তাদের আট কর্মকর্তাকে সরিয়ে নিয়েছে। তারা আগামী দুই মাস দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। এরপরই এই কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে ফের পাঠাবে কিনা সিদ্ধান্ত নেবে। এমনকি বিক্রেতাদের সঙ্গে এই কোম্পানির প্রতিনিধিদের ঢাকায় যে মিটিং হওয়ার কথা ছিল তার স্থান পরিবর্তন করে এখন তা হংকংয়ে করা হবে।

কারখানা মালিকদের অভিযোগ, গুলশান হামলার পর ক্রেতাদের অনেকেই বাংলাদেশে তাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠকের জন্য আসছেন না। তারা দেশের বাইরে বৈঠক করার কথা বলছেন। তবে তারা এও বলেন যে, বাংলাদেশ থেকে যে ক্রেতারা দীর্ঘদিন ধরে পোশাক ক্রয় করছেন তারা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় রেখে এখনো পোশাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে প্রাধান্য দেবেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পোশাক খাতে বেশকিছু সমস্যা তৈরি হলেও এখনো বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশকে বন্ধু দেশ বলেই মনে করেন। তারা সাময়িকভাবে হয়তো ক্রয়াদেশের জন্য মালিকদের বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে বৈঠক করতে বলছেন, কিন্তু পুরনো বন্ধুর সঙ্গে তারা ব্যবসা বন্ধ করবেন না। বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেরদৌস পারভেজ বিভন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কথা সত্য যে, গুলশান ঘটনার পর বেশ কিছুদিন ক্রেতারা বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা বৈঠকের জন্য আমাদের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার কথা বলেন। ব্যবসা ধরে রাখতে আমরা দেশের বাইরে গিয়েও বৈঠক করেছি। বিশেষ করে বৈঠকের জন্য আমাদের সিঙ্গাপুর, হংকং ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে যেতে হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশিদের আশ্বস্ত করতে আমরা নিরাপত্তা রক্ষী ও আর্মড ফোর্সের ব্যবস্থা করেছি। অ্যাডামস অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও  বিজিএমইএর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক মো. শহীদুল হক মুকুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গুলশান ঘটনাসহ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি ক্রেতারা আতঙ্কিত। এর ফলে বেশ কয়েকজন বিক্রেতাকেই বিদেশে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে। তিনি বলেন, যদি আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশে আর বড় ধরনের হামলা না হয় তবে আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব।

সর্বশেষ খবর