মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
বন্যা

খাদ্য পানি ওষুধের সংকট

কোথাও পানি বেড়েছে কোথাও কমেছে

প্রতিদিন ডেস্ক

খাদ্য পানি ওষুধের সংকট

বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঘর-বাড়ি। খোলা আকাশের নিচে দুর্গত মানুষের মানবেতর জীবন-যাপন। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার আকনকান্দি গ্রামের ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোনো কোনো নদীর পানি কমতে থাকলেও বন্যা দুর্গতদের অবস্থার উন্নতি হয়নি। তারা খাদ্য, খাবার পানি এবং ওষুধপত্রের অভাবে দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন। এদিকে বন্যার্ত এলাকা থেকে আরও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক  ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

জামালপুর : জামালপুরে যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ছে   ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীগুলোর পানি। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৩ সেন্টিমিটার কমে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। জেলার ৭টি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছেন। ১০ দিন যাবৎ পানিবন্দী এসব মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। খাবার ও পানীয় জলের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। ফরিদপুর : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ছমির বেপারী ডাংগী গ্রামে গতকাল দুপুরে বন্যার পানিতে ডুবে তাইম নামের দুই বছরের এক শিশু মারা যায়। তাইম ডাংগী গ্রামের ফরহাদ ফকিরের পুত্র। এ ছাড়া গত রবিবার বিকালে চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চরসালেপুর পূর্ব গ্রামের মৃত সাদি বেপারীর ছেলে মুদি দোকানি আলী বেপারী বন্যার পানিতে ডুবে মারা যান। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বানভাসিদের দুর্ভোগ কমেনি। এখনো প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগের জীবনযাপন করছেন। এসব মানুষের মধ্যে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাগুলোতে ত্রাণ নিয়ে জনপ্রতিনিধিরা গেলে শত শত নারী পুরুষ ভিড় জমাচ্ছেন। তবে অপ্রতুল হওয়ায় সবাই ত্রাণ পাচ্ছেন না। কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান টি.এম. শাহাদত হোসেন ঠাণ্ডু জানান, ইউনিয়নের ২৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। ত্রাণ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫০০ মানুষের মাঝে। গাইবান্ধা : তিন দিন ধরে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কমতে থাকলেও এখনো তা বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার  ৪৩ সেন্টিমিটার উপরে ছিল এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এবারের বন্যায় ফুলছড়ি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬টি ব্রিজ ধসে গেছে। গতকাল সকালেও বন্যার পানির তোড়ে ফুলছড়ি উপজেলার কালিরবাজার সড়কের পশ্চিম ছালুয়া গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙে গেছে। গাইবান্ধা-ফুলছড়ি সড়কে গোদার বাজারের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলা সদরের সঙ্গে গাইবান্ধার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফরিদপুর : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে সদর উপজেলার আলিয়াবাদ, নর্থচ্যানেল ও ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কয়েক হাজার হেক্টর জমির নানা প্রজাতির ধানসহ সবজির খেত নতুন করে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি স্কুল-মাদ্রাসায় পানি উঠায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

অপরদিকে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে রয়েছেন। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের বন্যার পানিতে পড়ে আলী হোসেন নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। শরীয়তপুর : ২৪ ঘণ্টায় শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ঢুকে পড়েছে ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, নড়িয়া ও গোসাইরহাট, শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামে। পাানিবন্দী রয়েছেন ৫৪টি গ্রামের ৯০ হাজারেরও অধিক মানুষ।

সর্বশেষ খবর