বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

টিকে থাকার চেষ্টায় জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছে সরকার। যে কোনো সময় তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা আসতে পারে। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকলে এখন তারা গুরুত্বহীন। অতি সম্প্রতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানেও বাদ পড়ছে জামায়াত। দলের রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো অঘোষিত বন্ধ। নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জরিত। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নাই বললেই চলে। সবমিলিয়ে শঙ্কা ও চাপের মধ্য থাকা জামায়াতে ইসলামী এখন টিকে থাকার চেষ্টায় নিয়োজিত। দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জামায়াতের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা নতুন নতুন চিন্তাভাবনা করছেন। বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। সরে আসছেন পুরনো অবস্থান থেকে। জানা গেছে, রাজনীতি নিষিদ্ধের সম্ভাব্য ঘোষণাকে সামনে রেখে জামায়াত নতুন নামে আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। নতুন সংগঠনের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের প্রাধান্য দেওয়ার কৌশল গ্রহণ করেছে। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একটি অংশ যারা জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন তারা এতদিন গোপনে কাজ করলেও বর্তমানে তারা পরিবর্তনের পক্ষে প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়েছেন। এই প্রতিবেদন তৈরির আগে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, রাজনীতিতে টিকে থাকতে নতুন নামে দলের আত্মপ্রকাশসহ যা যা করণীয় সবই করা হবে। সরকার জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ করলে তারা নতুন নেতৃত্বে নতুন সংগঠন গড়ে তুলবেন। সেই সংগঠনে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা রাখা কোনো ব্যক্তির স্থান হবে না। নতুন সংগঠনের নামকরণ হতে পারে বাংলাদেশ ডেপেলপমেন্ট পার্টি বা বিডিপি। নতুন সংগঠনের সম্ভাব্য নেতৃত্বে থাকতে পারেন বর্তমান জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আজাদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ একজন সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। অস্বীকার করব না, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সে সময়কার সংগঠনের কিছু নেতার ভূমিকা বিতর্কিত ছিল। তাদের দায় আমরা নিতে পারি না। আমরা আদর্শের রাজনীতি করি। যদি আগামী দিনে জামায়াতে ইসলামীকে ধরে রাখা না যায় তাহলে আমরা কী নিয়ে রাজনীতি করব? দল না থাকলে আদর্শ তো থাকবে। সেই আদর্শকে সামনে রেখেই আমরা তখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংগঠনকে নতুন আঙ্গিকে সাজাব। বিতর্কিত, নিন্দিত ও প্রশ্নবিদ্ধ পুরনো নেতৃত্বকে সরিয়ে দিয়ে দলে স্বাধীনতার প্রজন্মের স্বচ্ছ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজেদের আর্দশকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করব। এদিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ চার নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর বিচারের রায়ে এ তালিকায় রয়েছেন আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। যে মুহূর্তে রাজধানীর মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধ। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের বহু নেতা-কর্মী মামলায় জর্জরিত। প্রায় সবাই প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারেন না। বিএনপির কাছেও দলের কদর আগের মতো নেই। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী কীভাবে টিকে থাকবে এ প্রশ্ন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সর্বত্র। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আদালতের আদেশে নিবন্ধন বাতিলের ফলে দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা হারানো জামায়াতে ইসলামী যদি দেশের গণতান্ত্রিক দৃশ্যপটে আবারও আসতে চায়, তাহলে তাদের সামনে একটিই পথ খোলা আছে। আর সেটা হলো, দলের নাম পরিবর্তন করা এবং নতুন করে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নেওয়া।

সর্বশেষ খবর