বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জামায়াতকে ওইভাবে ২০ দলে রাখা হবে না

----------এমাজউদ্দীন আহমদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জামায়াতকে ওইভাবে ২০ দলে রাখা হবে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০ দলের মধ্যে জামায়াতকে ‘ওইভাবে’ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই দলটি এখন বিএনপির সম্পদ নয়, বোঝায় পরিণত হয়েছে।” তিনি গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত ‘দেশে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। বক্তৃতা করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (অব.), সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের নেতা মেজবাউর রহমান, নাসরিন সিদ্দিকী। জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা একটি রাজনৈতিক দল। সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে ওই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার ?দল, তিনিই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ২০ দলের মধ্যে এ দলটিকে আর রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। দলটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। এটি এখন আর সম্পদ নয়।’এমাজউদ্দীন বলেন, ‘জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের একটি বড় অংশের জন্ম মুক্তিযুদ্ধের পরে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। তারাও তো চাইবে না, জাতীয় ঐক্য ব্যর্থ হোক। যৌক্তিকতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’ জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জামায়াতে ইসলামী এবং হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ বাদে বাকি সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে কনভেনশন ডাকতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “জামায়াত এবং গণবাহিনীর ইনুকে ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের একটি কনভেনশন আহ্বান করুন। জাতীয় ঐক্য আপনার ঘরে ঘরে হবে না। যারা বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানিয়েছে, তাদের দিয়ে আপনি ঐক্য করলেও জাতি করবে না। সেজন্য আপনার ‘জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে’, কথাটা এ সভা থেকে খারিজ করে দিলাম।” কাদের সিদ্দিকী দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘এ দেশের ঐক্য হবে মানুষের ঐক্য। যারা মানুষের নেতা তারাই দেশ চালাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৪ তারিখ মাগরিবের নামাজের পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ২০-দলীয় জোটের সঙ্গে নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করব।’ আ স ম রব বলেন, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে আত্ম-অহমিকা, দাম্ভিকতার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। জাতি আজ মহাসংকটে। বড় দুই জোট আর ভুল রাজনীতির কারণে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গি দমনের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীমতও দমন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্র চাই।’

 

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশের বর্তমান এ পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকার বোঝে এক, বিরোধী দল ভাবে আরেক। আবার মানুষ ভাবে অন্য। দেশের মানুষ আজ নিরাপত্তা চায়, বাকস্বাধীনতা চায়। তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলেই জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, চলমান পরিস্থিতিতেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করলাম। সরকার দলের ছাত্রদের নেতারা কুমিল্লায় যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে তাদের দমন করলেই আর সন্ত্রাস থাকবে না।’ আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে উপড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু সরকার কতটুকু চায় সে বিষয়টি ভাবতে হবে। আসিফ নজরুল বলেন, শুধু জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বললেই হবে না। দেশে সুশাসন, মানবাধিকারের অভাব ও দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে।

শফিউল আলম প্রধান বলেন, মানুষের আজ বাকস্বাধীনতা নেই। মানুষের নিরাপত্তা নেই। জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে। দেশ তো নিজের ভাবতে পারছে না মানুষ। তাহলে জাতীয় ঐক্য কার জন্য, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সর্বশেষ খবর