বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কেউ কাউকে ছাড়ছে না বিএনপি জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে আপাতত ছাড়ছে না। অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের বক্তব্যের পর জামায়াতের বিবৃতি আর সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিবের কথাবার্তায় তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। বাইরে যত চাপই থাকুক না কেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই সামনে এগোবে বিএনপি। জোটবদ্ধভাবেই আন্দোলন আর নির্বাচনের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়েছে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে জামায়াতকে ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেই বিএনপির।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় সংকটে এই জোট তৈরি হয়। তা নির্বাচন ও আন্দোলনকেন্দ্রিক জোট। চলমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি এখন সবার সঙ্গেই ঐক্য করতে চায়। বাইরে যত চাপই থাকুক, জোট থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার নীতিতে নারাজ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যদিও বিএনপির একটি অংশ জামায়াত ছেড়ে বিএনপি জিয়াউর রহমানের আদর্শের ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে। সম্প্রতি জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে দলীয়ভাবেই বিএনপি চেয়ারপারসন একটি প্লাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলকেও সেই ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পাওয়ায় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে চা চক্রে বসছেন বেগম খালেদা জিয়া। এরই অংশ হিসেবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের একটি প্রতিনিধি দল আজ সন্ধ্যায় চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবনে চা চক্রে বসছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি মনে করছে বর্তমান যে ক্রাইসিস চলছে, তা জাতীয় সমস্যা। এ নিয়ে দেশের সব দলের সঙ্গেই আমরা আলোচনা করতে চাই। সরকারের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

বিএনপির একটি অংশ অবশ্য বলছে, জঙ্গিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকারও এটা কোনোভাবেই হতে দেবে না। কয়েকটি দল এরই মধ্যে শর্ত নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। তারপরও বৃহত্তর স্বার্থে সংলাপে বসতে চায় বিএনপি। তবে বিএনপি তাতে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখছে না বলেও মনে করছেন একটি অংশ। জানা যায়, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০ দলের মধ্যে জামায়াতকে ওইভাবে না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’—বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবী শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের এমন বক্তব্যে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। মঙ্গলবার সকালে এমাজউদ্দীনের এমন বক্তব্যের পর দুপুরেই তাত্ক্ষণিক সতর্কবার্তা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। বক্তব্য প্রত্যাহারেরও হুঁশিয়ারি দিয়ে দল বলেছে, এমাজউদ্দীন এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন। তাকে ২০ দলের মুখপাত্র করা হয়নি। অবিলম্বে তার এ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। জামায়াতের কঠোর বার্তার পর গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন যা বলেছেন সেটা তার ব্যক্তিগত, বিএনপির বক্তব্য নয়। বিএনপি সূত্র জানায়, জামায়াতকে ছাড়ার জন্য দলের ভিতরে-বাইরে চাপ খুব বাড়ছে। দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও নানা সময়ে চাপ দিয়ে চলছে। জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্যে জামায়াতকে বড় বাধা মনে করছে তারা। দলের প্রভাবশালী অংশই জামায়াত বিরোধিতায় মুখর। তরুণদের বড় অংশই জামায়াতের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক বৈঠকেও জামায়াত ছাড়তে চেয়ারপারসনের ওপর চাপ দেওয়া হয়। এত চাপের পরও জামায়াতকে ছাড়ার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেননি বেগম জিয়া। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধ করার আগে তাকে ছাড়বে না বিএনপি। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় দলটি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে পারছে না। সেই হিসেবে জামায়াতকে নিয়ে জোট আগামীতে নির্বাচনে গেলে তাদের ভোট ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হবে মনে করে বিএনপি। বিএনপি এও আশঙ্কা করে, জামায়াত ছেড়ে দিলেই সরকার তাদের কব্জা করে নেবে। সেটাও দলের নীতিনির্ধারকরা চাইছেন না। নানা হিসাব-নিকাশ করেই বিএনপি আপাতত জামায়াতকে ছাড়ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে কিছু লোক পরামর্শ দিচ্ছে ২০-দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বিদায় করতে। মনে রাখতে হবে, জনগণের ভোটাধিকার বহাল ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ জাতীয় প্রয়োজনে ২০-দলীয় জোট হয়েছে। চার দল থেকেই আজ ২০ দলের সৃষ্টি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার অর্থই হলো, ২০-দলীয় জোটকে দুর্বল করা। এই পরামর্শ যারা দিচ্ছেন, তারা সরকারের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন। এদের ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সজাগ থাকতে হবে। জামায়াত সূত্র জানায়, জুলুম নির্যাতনসহ নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জোটগত আন্দোলন করে আসছে জামায়াত। বিএনপির সঙ্গে জোট না করে একলা চল নীতিতে থাকলে জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হতো না বলেও মনে করে জামায়াতের একটি অংশ। এত কিছু ত্যাগ করেও বিএনপির সঙ্গে জোট অটুট রয়েছে। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও জোট ছেড়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই জামায়াতের। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তাত্ক্ষণিক বিবৃতি দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জাতির এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে ২০০০ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান স্বৈরশাসনের যুগে ওই জোট ২০-দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়। তাছাড়া ২০-দলীয় জোট এমাজউদ্দীনকে জোটের কোনো মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলার অধিকার তার নেই। তিনি সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত ও অযাচিত আচরণ করছেন। এর জন্য অবশ্যই তাকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে জনগণ ধরে নিতে বাধ্য হবে তিনি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আলো ও অন্ধকারের খেলায় লিপ্ত রয়েছেন।’

সর্বশেষ খবর